বর্তমানে কর্মব্যস্ত জীবনে নিজের জন্য় সময় কমে গিয়েছে। পেশাদার জীবনে প্রবেশ করলেই শুরু হয়ে যায় দৌড়। আগা পাশ তলা না দেখে শুধু দৌড় আর দৌড়। আর এই দৌড়ের মধ্যে দিয়ে শরীরের একটা অংশ ক্রমশ বাড়তে থাকে। সেটা হলো পেট, গোদা বাংলায় যাকে ভুঁড়ি বলি। এটা যেমন দ্রুত বাড়ে, তেমনই ধীর গতিতে কমে। এই প্রতিবেদনে জেনে নিন পেটের মেদ কমানোর উপায় (Reduce Belly Fat)। পুরোটাই ঘরোয়াভাবে করতে পারবেন, ফলে খুব একটা বেশি সময়ও লাগবে না।
Table of Contents
পেটের মেদের ধরন ও সেটা থেকে আসা বিপদ
ভুঁড়ি কমানোর আগে ভুঁড়ি নিয়ে জানা দরকার। পেটের চর্বি দুই ধরনের হয়ে থাকে
- Subcutaneous fat: এটা ত্বকের নিচে জমে থাকে, ফলে ওজন বেশি হয় ও সহজে বোঝা যায় না
- Visceral fat: শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে চারপাশে জমে থাকে এবং এটি সবচেয়ে বিপজ্জনক
এই visceral fat-এর ফলে হৃদরোগ, টাইপ টু ডায়াবিটিস, স্ট্রোক ও মেটাবলিক সিনড্রোমের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
পুষ্টিবিদের পরামর্শ
এই বিষয়ে একাধিক পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসক সতর্ক করেছেন। যেমন ওবেসিটি, মোটাবোলিক মেডিসিন ও ক্লিনিকাল নিউট্রিশনের বিশেষজ্ঞ ডঃ অঞ্জলি হুডা পরামর্শ দিয়েছে। জানান, চিনি, কার্বস, পাস্তা ও পাউরুটি কম খেতে হবে। বদলে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। প্রোটিন পেশি গঠনে সাহায্য করে।
বলিউড অভিনেত্রী করিনা কাপুরের ডায়েটিশিয়ান আর রাজুতা দ্বিয়েকর Portion control-এর দিকে জোর দেন। তাঁর মতে, সবকিছুই যদি পরিমাণ বুঝে খাওয়া যায় তা হলে সমস্যা হয় না।
পেটের মেদ কমানোর উপায় (Reduce Belly Fat)
ব্যালেন্স প্লেট কনসেপ্ট
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন প্রতিদিনের খাবারের প্লেটে যেন সবকিছুর ভারসাম্য বজায় থাকে। অর্ধেক ফল ও সবজি, এক চতুর্থাংশ প্রোটিন এবং এক চতুর্থাংশ কমপ্লেক্স কার্বস (ভাত বা রুটি) থাকে।
এতে শরীর একসঙ্গে ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন, কার্বস সবই পাবেন।
Portion Control নীতি কী?
- খাবার তুলনামূলকভাবে কম খান
- ভরপেট খাবেন না। ৭৫‑৮০% খান, আর বাকিটা খালি রাখুন
- দুটো খাবারের মাঝে বিরতি দিন
মিষ্টি এড়িয়ে চলুন
- মিষ্টি, বিস্কুট, পাউরুটি বা পাস্তা, চিনি দেওয়া চা বা সোডা এড়াতে হবে
- এগুলো আপনার শরীরের ইনস্যুলিন বাড়িয়ে দিয়ে শর্করাকে ফ্যাটে রূপান্তরিত করে
ঘরোয়াভাবে পেটের মেদ কমানোর উপায়
এই কয়েকটা খাবার আপনার বাড়িতে থাকলেই হলো। সেগুলো মিলিয়ে মিশিয়ে খেলে আপনার ভুঁড়ি অনেকটাই কমবে।
- ডিম, মুসুর ডাল, ওটমিল, মুগ ডাল: ফাইবার ও প্রোটিনের ভালো উৎস, এতে পেটটা ভরা থাকে।
- ফুলকপি, ব্রকোলি, রাগি: কম ক্যালোরি ও হাই ফাইবারে ভরা
গ্যাস-অম্বল থেকে মুক্তি, ঘরেই বানিয়ে ফেলুন ম্যাজিক ড্রিঙ্ক
লো ফ্যাট ডায়েট:
ফ্যাট‑মুক্ত দই বা বাটারমিল্ক খুব কার্যকরি। এটা খিদে কমায়। পাশাপাশি পেটের গুড ব্যাকটেরিয়াকে সক্রিয় করে হজমে সাহায্য করে।
স্বাস্থ্যকর ফ্যাট:
বাদাম, চিয়া সিড, অলিভ অয়েল ও নারকেল তেল: এ গুলো শরীরে উপযোগী ফ্যাট সরবরাহ করে যা ঢেকুর ওঠা, গ্যাস হওয়ার কমায়।
ডিটক্স ড্রিঙ্ক:
- গ্রিন টি + লেমন: মেটাবলিজ়ম বাড়ায়। এতে থাকে অ্য়ান্টিঅক্সিড্যান্ট। শরীরের টক্সিনগুলো বের করতে সাহায্য করে।
- আদা চা: হজম উন্নত করে, ব্লোটিং ও গ্যাস কমায়।
- হলুদ চা: হলুদ চর্বি গলাতে সাহায্য করে।
শরীর চর্চাও গুরুত্বপূর্ণ পেটের মেদ কমানোর জন্য
হাঁটা ও ব্যায়াম:
দৈনিক ৩০-৪৫ মিনিট হাঁটুন। খাবারের পর একটু হালকা হাঁটা ও খুব দ্রুত গতিতে হাঁটা দরকার।
স্ট্রেংথ ট্রেনিং:
সপ্তাহের তিন থেকে চারদিন এটা করতে পারে। তালিকায় থাকবে স্কয়্যাট, লাঞ্জেস, পুশ আপ, ডেড লিফট (যদি কোমরে সমস্যা না থাকে)। এর সঙ্গে কার্ডিও করতে হবে। এতে দ্রুত ক্যালোরি বার্ন করে ও এতে চর্বিও কমে।
ব্যায়ামের পাশাপাশি যোগচর্চাও গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন ৩০ মিনিট যোগা করতে পারলে আপনার উপকার হবে।
জিমে যাচ্ছেন? এই পাঁচ কাজ করলেই বিপদ
ঘুম ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম:
খাবার, ব্যায়াম করতে গেলে যেই শক্তিটা লাগবে সেটা আসবে ঘুম থেকে। প্রতিদিন ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম দরকার। ঠিকঠাক ঘুম না হলে হজম হবে না। সারাদিন ঝিমুনি থাকলে আপনি নিজের সেরাটা দিতে পারবেন না।
তবে কোনও কিছুই রাতারাতি হয় না। তাই এই পদ্ধতিগুলো মেনে চলার পরেও অপেক্ষা করুন। টানা মেনে চললে ৩-৪ মাসের মধ্যেই আপনি ভালোমতো ফল দেখতে পারেন। তবে সবকিছুর শেষে দরকার শৃঙ্খলা, এটা না এলে আপনি যেটাই খান না কেন উপকার পাবেন না। সারাদিন মেনে চললেন আর মাঝে একটা তেলেভাজা খেয়ে নিলেন, এতে হিতের বিপরীত হবে। ফলে নিজের মুখ ও মনকে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। নয়তো সব পরিশ্রম মাঠে মারা যাবে।
তথ্যসূত্র:
Dr Anjali Hooda’s advice on belly fat reduction
Aaj Tak
PopXO
Times of India
FAQ
পেটের মেদ কমানোর ঘরোয়া উপায় কী কী?
ঘুম ঠিক রাখা, হালকা ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। বিশেষ করে ওটস, লেবুর জল, মেথির জল ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে।
ভুঁড়ি কমানোর জন্য কী খাওয়া উচিত?
প্রাকৃতিক খাবার যেমন-
লেবুর জল, গ্রিন টি, ওটস, সেদ্ধ ডিম, ছোলা, মেথির জল, টক দই
ভুঁড়ি বাড়ার কারণ কী?
অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড, মিষ্টি খাওয়া, মানসিক চাপ, কম ঘুম, এবং লম্বা সময় ধরে এক জায়গায় বসে থাকা। এগুলো মেটাবলিজম কমিয়ে দেয়।
দিনে ক’বার খেলে ওজন কমবে?
দিনে ৫–৬ বার অল্প অল্প করে খেলে হজম ভালো হয় এবং শরীর বেশি ক্যালোরি বার্ন করে।
রাতে কী খেলে পেটের মেদ কমবে?
রাতে হালকা খাবার খান যেমন সেদ্ধ সবজি, স্যুপ, রুটি ও স্যালাড। দুধ বা টক দই ও ভালো।
ভুঁড়ি কমানোর জন্য ব্যায়াম
হাঁটা (৩০ মিনিট)
প্ল্যাঙ্ক
সিট-আপ
সাইক্লিং
স্লো স্কোয়াট
পেটের মেদ কমাতে কতদিন সময় লাগে?
আপনার জীবনযাপন এবং খাদ্যাভ্যাসের ওপর নির্ভর করে। গড়ে ২–৩ মাস নিয়মিত অভ্যাসে পরিবর্তন আনলেই ফল পাওয়া যায়।
পেটের মেদ কমানোর ঘরোয়া পানীয় কী?
মেথির জল, লেবু ও মধু মিশ্রিত গরম জল, শসার জল, আদা চা
Discover more from Unknown Story
Subscribe to get the latest posts sent to your email.
Leave a ReplyCancel reply