সমৃদ্ধ নষ্কর
সাদা উর্দি ধারি দেখলে আপনি কী বুঝবেন? পুলিশ!
নীল সাদা পোশাকে কমবয়সী ছেলে মেয়েদের দল দেখলে কী বুঝবেন! ছাত্রছাত্রী। তেমনি ডাক্তার এর পোষাক কেমন? সাদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কোট পরা, গলায় স্টেথোস্কোপ ঝোলানো, বুক পকেটে কলম। এটাই তো ডাক্তারদের পরিচয় আমাদের কাছে। হাসপাতাল বা ডাক্তারখানায় আমরা সাধারণত এইরকম দেখেই অভ্যস্ত। কিন্তু আপনি কি জানেন, ডাক্তারের পোষাক আগে সাদা ছিল না। ছিল পুরো কালো। বিশেষ করে শল্য চিকিৎসকদের। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই ঘটনা।
কেন কালো পোশাক পরতেন শল্য চিকিৎসকরা?
কোনো অপারেশনের পর এই কালো পোশাকে রক্তের দাগ লাগলে সেটা বোঝা যেতো না। তাই কালো পোশাকের ব্যবহার হতো। তারও আগে কিন্তু হালকা রঙের পোশাক ব্যবহার হতো, আর সেটা সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃতভাবে। কারণ যে ডাক্তারের পোশাকে যত বেশি রক্তের দাগ সে তত বেশি অভিজ্ঞ। তখন সমাজে এই রকমভাবে ডাক্তারের মান দেখা হতো।
কিন্তু হিতে বিপরীত হলো। যেখানে নোংরা সেখানে জীবাণুর আখড়া। কিন্তু তখন সাধারণ মানুষ বা ডাক্তার এই বিষয়ে বৈজ্ঞানিকভাবে কিছুই জানতেন না। তাই অপারেশনের পর রুগী মৃত্যু অনেক গুণ বেড়ে যায়। ১৮৬০ সালে লুই পাস্তুর তাঁর বই জার্ম থিওরি প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন অনুবীক্ষণিক জীব বা ব্যাকটেরিয়া বাইরে থেকে মানব শরীরে প্রবেশ করে ক্ষতি করে। কিন্তু এই থিওরি সবাই মানবে কেনো! কেউ মানতে রাজি নয়।
কীভাবে বদল হলো ডাক্তারদের পোশাকের রং?
তখনই জোসেফ লিস্টা নামক ব্যক্তি, যাকে আধুনিক শল্য চিকিৎসার জনক বলা হয়। তিনি স্বাস্থ্যবিধি পরিচ্ছন্নতা(হাইজিন) ও স্টারেলিটির উপর জোর দেন। যা আধুনিক চিকিৎসা জগতে এক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৮৬৫ সালে এই জোসেফ লিষ্টার অ্যান্টিসেপটিকের প্রযুক্তি ও ব্যবহার নিয়ে গবেষণা/পরীক্ষা করতে থাকেন। সঙ্গে তিনি তাঁর জার্ম থিওরিও কাজে লাগাতে থাকেন। ১৮৬৭ সালে তিনি প্রথম এই পদ্ধতি জনসমক্ষে আনেন। (ANTI SEPTIC MEASURES SUPPORTING GERM THEORY) তারপর ১৮৮০ সালে মানুষ বুঝতে পারেন স্বাস্থ্যবিধি পরিচ্ছন্নতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তাই ডাক্তারি ক্ষেত্রে বিশেষ করে শল্য চিকিৎসায় পরিচ্ছন্নতা দেখতে সাদা কাপড়ের ব্যবহার অপরিহার্য।
মানুষ সাধারণত পুরোনো ধারণা থেকে বেরোতে পারে না। তাই হয়তো লুই পাস্তুর বা জোসেফ লিষ্টার এর মতো মনীষী কে চিনতে এত দেরি হলো। কিন্তু এই থিওরি যদি ধর্মের নামে প্রচার হতো তখন সৃষ্টি হতো অচ্ছূত সম্প্রদায়ের। ঠিক যেমন প্রাচীন ভারতের ঘটনাগুলো। মুচি, মেথর সম্প্রদায় নোংরা ঘেঁটে কাজ করে বলে তাদের থেকে মানুষ দূরে থাকতো। তাদেরকে সমাজের বাইরে রাখা হতো। বৈজ্ঞানিকদিক থেকে না বুঝে শুধু ধর্মের দোহাই দিয়ে তথাকথিত অচ্ছূত করে রাখা হতো।
Discover more from Unknown Story
Subscribe to get the latest posts sent to your email.
Leave a Reply