African tribe in India: দেশের মধ্যে এক টুকরো আফ্রিকা, চিনে নিন গুজরাটের জাম্বুর গ্রামকে

details about siddi community the African tribe in India

নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধানের দেশ ভারত। এখানে যেমন একাধিক ভাষা আছে, তেমনই রয়েছে বিভিন্ন বর্ণের মানুষ। এই দেশে যেমন রয়েছেন ওপার বাংলা থেকে দেশভাগের সময় আসা মানুষ, তেমনই রয়েছে বিদেশি মুসলিম শাসকদের বংশের মানুষরাও। আপনাকে যদি বলি এই দেশে রয়েছে একটা ছোট্ট আফ্রিকা। অবাক হবেন? ঠিক ভারতের মধ্যে একটু পাকিস্তানের মতো রয়েছে এক টুকরো আফ্রিকা। জেনে নিন সেই আফ্রিকান জনজাতির (African tribe in India) ব্যাপারে।

ভারতে কোথায় থাকে আফ্রিকান জনজাতির মানুষরা?

গুজরাটের গির সোমনাথ জেলার একটা গ্রাম জাম্বুরা। যেই গ্রামে ঢুকলে আপনার মনে হবে আফ্রিকার কোনও পিছিয়ে পড়া গ্রামে প্রবেশ করেছেন। এই গ্রামে থাকে সিদ্দি সম্প্রদায়ের মানুষ। যারা আফ্রিকান বংশোদ্ভূত। অর্থাৎ তারা হলো African tribe in India.

শুধু গুজরাট নয়, ভারতের পশ্চিম বা দক্ষিণ পশ্চিমের একাধিক রাজ্যে এই সিদ্দি জনজাতির বাসস্থান। সেখানে গুজরাটের জাম্বুরা গ্রামে সংখ্যাটা বেশি।

Pakistan Village in Bihar: ভারতের মধ্যে রয়েছে এক টুকরো পাকিস্তান, জানুন ইতিহাস

ভারতে কী ভাবে তৈরি হলো আফ্রিকানদের এই গ্রাম?

আদতে সিদ্দি হলেও এদের আগে বলা হতো বাদশাহ। পরে ভারত সরকার এদের সিদ্দি জনজাতিতে অন্তর্ভুক্ত করে। এই জনজাতির প্রধান ভাষা হচ্ছে বান্টু। এখানকার মানুষ প্রধানত ইথিওপিয়া, কেনিয়া, তানজানিয়া, মোম্বাসা এবং উগান্ডা বংশোদ্ভূত। বর্তমানে যারা আছে তাদের প্রত্যেকেরই জন্ম ভারতে, কিন্তু তাদের কয়েক প্রজন্ম আগে ভারতে চলে আসে। আজ থেকে প্রায় ৯০০ বছর আগে নানা পর্যায়ে তাদের ভারতীয় উপমহাদেশে নিয়ে আসা হয়। ইতিহাসবিদদের মতে, কিছু সিদ্দি মুসলিমকে আরব ব্যবসায়ীরা দাস হিসেবে নিয়ে আসেন, যারা পরে মুক্তি পেয়ে ভারতে মিশে যান।

এদের মধ্যে আবার অনেককে যুদ্ধবন্দী, সামরিক দাস, বংশানুক্রমিক দাস হিসাবে পর্তুগিজ ও পরে ইংরেজরা নিয়ে আসে। তারাই ভারতে বসবাস শুরু করে এবং এখানে বংশ বিস্তার করতে থাকে।

এই সিদ্দিদের দেখা যাবে দাক্ষিণাত্য, গুজরাট ও মহারাষ্ট্রে।

African tribe in India-দের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতি

ভাষা ও ধর্মীয় আচরণ

তাদের ভাষা বান্টু হলেও এরা যে যেখানে থাকে সেখানকার ভাষা আয়ত্ত্ব করে নেয়। নিজেরা হিন্দি, মারাঠি, গুজরাটি, কন্নড়, ঊর্দুভাষা শিখে নিয়েছে। নিজেদের মধ্যে বান্টু ভাষায় কথা বললেও বাইরে সেটা বলেন না।

তাঁদের উপাসনা, বিয়ে, বেশিরভাগ ভারতীয় রীতিচর্চা থাকলেও, নৃত্য ও সুরের ভাষায় আফ্রিকার আত্মা মিশে আছে।

১৯২১ থেকে ২০২৫, বাঙালির আবেগের বড় ম্যাচ, ফিরে দেখা কলকাতা ডার্বির ইতিহাস

পোশাক ও দৈনন্দিন চরিত্র

অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকলেও সিদ্দিরা সবসময়ে আনন্দে থাকে। যেমন গুজরাটের জাম্বুর গ্রামের মানুষদের পেশার অন্যতম হচ্ছে পর্যটকদের নাচ, গান দেখানো। মহিলারা শাড়ি, ব্লাউজ বা ফ্রক পরে থাকেন। কখনও আফ্রিকান ধাঁচের ঝলমলে কাপড়েও দেখা যায়।
ছেলেরা প্যান্ট-শার্ট পরতেই বেশি পছন্দ করেন। এই জাতির মানুষদের গায়ের রং কালো হয়। মুখ ও দেহের গড়ন আফ্রিকানদের মতো।

সিদ্দি জনজাতির খাদ্যাভাস

তাদের খাদ্য তালিকায় ভারতীয় রান্নার ছাপ স্পষ্ট। তালিকায় রয়েছে শাক, ভুট্টা থেকে তৈরি রুটি, মাছ, মাংস, ভাত, ডাল। এরসঙ্গে যোগ হয় আফ্রিকান মশলা। তবে বিয়ে বা কোনও উৎসবের সময়ে আফ্রিকান একাধিক পদ বানানো হয়।

সিদ্দিদের বর্তমান অবস্থা

Unfiltered By Samdish চ্যানেলে আপলোড করা সিদ্দিদের নিয়ে তৈরি ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে গুজরাটের জাম্বুর গ্রামে পরতে পরতে দারিদ্রতা। গ্রামের কাঁচা রাস্তা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা, ইতি উতি ময়লা ফেলার ছবি সাধারণ। বর্ষাকালে পুরো গ্রাম হয়ে যায় জলাশয়। বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়া বা দৈনন্দিন কাজের জন্য যাওয়া তখন কঠিন হয়ে পড়ে। একাধিক কাঁচা বাড়ি থাকায় সেটা ভেঙেও পড়ে। শৌচালয়ের জল ঘরে ঢুকে যায় বর্ষাকালে। পাশাপাশি গ্রামে সিংহের উপদ্রবও রয়েছে।

গ্রামবাসীরা জানালেন, গ্রামে ২৫ বছর আগে বিদ্যুৎ প্রবেশ করলেও সেটা হাতে গোনা কয়েকটা বাড়িতে আছে। যাদের আর্থিক ক্ষমতা রয়েছে তারা টাকা খরচ করে মিটার নেন। যদিও তাতেও তাদের সুরাহা নেই। দিনে ৬-৭ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ থাকে না।

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, গ্রামের একজন পঞ্চায়েত প্রধান থাকলেও সেখানে সিদ্দিদের উন্নতির জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জাতপাত। যেহেতু সিদ্দি সম্প্রদায় ও মুসলিম তাই গ্রামের উচ্চ বংশ তাদের ধর্তব্যের মধ্যে ধরে না। তবে সিদ্দিরা নিজেদের জাতি নিয়ে গর্বিত। এখনও প্রথা মেনে সিদ্দিরা নিজস্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে বিয়ে করে। এই কারণে আফ্রিকা ছাড়ার এত বছর পরেও এই সম্প্রদায়ের মধ্যে আফ্রিকান ছাপ রয়েছে। তাদের মধ্যে আফ্রিকান ছাপ থাকলেও কেউ আফ্রিকার কোনও দেশে যাননি। এর কারণ সেই দারিদ্রতা। কারণ আফ্রিকায় যেতে যেই খরচ সেটা হয়তো একজনের আয় করতে কয়েক বছর লেগে যাবে। তাই হয়তো, বিমানে চড়াকে তারা লাক হিসেবে দেখেন।

তথ্যসূত্র
Wikipedia
Gujarat Tribal Research – Siddi Tribe
DD India (YouTube)
India Today
Unfiltered by Samdish – YouTube
The Wire



Discover more from Unknown Story

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply