Ram Setu: মহাকাশ থেকে দেখা যায়, বাস্তবে যাওয়া যায় না, রাম সেতুর ইতিহাস কী?

ram setu history

গুগল ম্যাপের দিকে ভালো করে তাকালে দেখা যাবে ভারতের সঙ্গে শ্রীলঙ্কাকে যুক্ত করেছে একটা সরু সুতোর মতো কিছু জিনিস। যেটা পরিচিত Ram Setu নামে। এই নামটা সকলের কাছে পরিচিত। শ্রীরামচন্দ্রের নামানুসারে তৈরি এই সেতু নিয়ে জল্পনা রয়েছে অনেক। মহাকাশ থেকে দেখা গেলেও সেখান দিয়ে হাঁটা যায় না। কী রয়েছে রাম সেতুর নেপথ্যে? জানুন বিস্তারিত-

কয়েক হাজার বছর ধরে এই সেতু নিয়ে বিতর্ক, বিশ্বাস আর বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান চলেছে। কারও দাবি, এটি প্রাকৃতিকভাবে তৈরি। আবার হিন্দু পুরাণ অনুসারে এটি হলো শ্রী রামচন্দ্রের বানর সেনার তৈরি সেতু, যা রামায়ণের যুগে লঙ্কাজয়ের অন্যতম সাক্ষ্য।

রাম সেতুর ইতিহাস

রামায়ণ অনুযায়ী, শ্রী রামচন্দ্র যখন সীতাকে রাবণের হাত থেকে উদ্ধার করতে লঙ্কা গিয়েছিলেন সেই সময়ে তখন বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত একটি সেতু তৈরি করেছিল বানরসেনা। মধ্যে শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত একটি সেতু তৈরি করেছিলেন বানরসেনা।

এটি প্রায় ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ভারতের রামেশ্বরম থেকে শ্রীলঙ্কার মান্নার পর্যন্ত বিস্তৃত।

বাল্মীকির রামায়ণে এই সেতুর বিস্তারিত বর্ণনা আছে, যেখানে বলা হয়েছে বানরসেনা ভাসমান পাথর দিয়ে এই সেতু তৈরি করেছিল।

ব্যবহার করা হয় শুধু সংষ্কৃত ভাষা, ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রেখেছে ভারতের এই গ্রাম

Ram Setu কোথায় অবস্থিত?

ভারতের তামিলনাড়ুর রামেশ্বরম থেকে শ্রীলঙ্কার মান্নার দ্বীপ পর্যন্ত।

এটি প্রায় ৩০–৫০ কিমি বিস্তৃত এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর গড় উচ্চতা ১–১০ মিটার, যা জোয়ার-ভাটার সময় অনেকটাই ডুবে যায়।

Google Maps এবং মহাকাশ থেকে রাম সেতু

২০০২ সালে NASA ও ISRO-র উপগ্রহ চিত্রে দেখা যায় বঙ্গোপসাগরের এই এলাকা (যেখানে রাম সেতু রয়েছে বলে দাবি করা হয়) গঠিত লম্বা ধূসর বালিয়াড়ি এবং প্রবাল প্রাচীর দিয়ে।

Google Earth-এ স্পষ্টভাবে এই রাম সেতুকে সাদা রেখার মতো দেখা যায়। একাধিক উপগ্রহ চিত্রে এটিকে পরিষ্কার দেখা গিয়েছে। তবে এটা কী দিয়ে তৈরি সেটা বোঝা যায়নি।

অনেক বৈজ্ঞানিক তত্ত্বে, সমুদ্রের স্রোত আর প্রবাল প্রাচীরের প্রাকৃতিক গঠনেই এটি তৈরি হয়েছে।

আপনি গুগল ম্যাচ খুললেন দেখতে পাবেন Ram Setu

ram setu history
উপগ্রহ চিত্র থেকে দেখা যাচ্ছে (লাল দাগ দেওয়া অংশ)

কেন রাম সেতুর উপর দিয়ে যাতায়াত করা যায় না?

রাম সেতু প্রায় পুরোপুরি নিমজ্জিত বা অগভীর।

বড় জাহাজ বা বোট চলাচলের জন্য প্রয়োজন ১০–২০ মিটার গভীরতা, কিন্তু রাম সেতুতে গড় গভীরতা মাত্র ১–৩ মিটার।

এর চারপাশে রয়েছে একাধিক সামুদ্রিক প্রাণী, ফলে এখান দিয়ে জাহাজ যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। অন্যদিকে গভীরতা কম থাকায় এখান দিয়ে জাহাজ যাতায়াত করলে তা আটকে যেতে পারে।

এখনও পর্যন্ত একাধিকবার এখান দিয়ে রাস্তা তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু তা সম্ভব হয়নি।

Ram Setu নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক

ভারতে Ram Setu শুধু ভৌগোলিক নয়, রাজনৈতিক বিতর্কেরও কেন্দ্রবিন্দু।
২০০৭ সালে সেতুসমুদ্রম শিপিং ক্যানাল প্রকল্প (SSCP) হাতে নেওয়া হয়েছিল, যাতে বড় জাহাজগুলো ভারতের পশ্চিম উপকূল থেকে পূর্ব উপকূল পর্যন্ত সরাসরি যেতে পারে।

এর ফলে সমুদ্র পথে বেশি ঘুরতে হবে না। বর্তমানে কোনও জাহাজ গুজরাট থেকে কলকাতায় আসতে গেলে, সেটাকে আরব সাগর থেকে শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ দিক ঘুরে ভারত মহাসাগর হয়ে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করতে হবে।

যদি রাম সেতু ভাঙা যায় বা সেখান দিয়ে জাহাজ যাতায়াতের ব্যবস্থা করা যায়, তা হলে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মাঝ দিয়ে জাহাজ যাতায়াত করতে পারে। এতে জাহাজকে কম পথ পেরোতে হবে এবং জ্বালানি বাঁচবে।

তবে অতীতে এটা নিয়ে চর্চা হলেও ধর্মীয় নিদর্শন হওয়ায় এটা নিয়ে খুব একটা বেশি কাটাছেঁড়া হয় না।

ভালোবাসার জন্য ভেঙেছিলেন আস্ত পাহাড়, জেনে নিন মাউন্টেন ম্যান দশরথ মানঝির গল্প

সেতুসমুদ্রম শিপিং ক্যানাল প্রকল্প কী?

SSCP প্রকল্পটি ১৮৬০ সালের ব্রিটিশ প্ল্যান থেকে এসেছে
এতে বলা হয়েছিল, রাম সেতু ও ম্যানার অঞ্চলে চ্যানেল কেটে দিলে ভারতীয় জাহাজগুলো শ্রীলঙ্কার চারপাশ ঘুরে যেতে হবে না
কিন্তু পরিবেশবিদরা বলেন, এটি করলে Marine Ecosystem বা সামুদ্রিক প্রাণীর জীবন বিপর্যস্ত হবে
এছাড়া, এই অঞ্চলে মাছ ধরে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করেন, সেটা নষ্ট হবে

Ram Setu মানুষের তৈরি না প্রাকৃতিক?

জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া বা GSI ও ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ওশেনোগ্রাফি (NIO)-র একাধিক সমীক্ষা অনুযায়ী, সেতুটি মূলত প্রবাল প্রাচীর, বালি আর চুনাপাথর মিশে তৈরি হয়েছে
কিছু রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, এই সেতুর গঠন প্রায় ৭০০০–১০০০০ বছর পুরনো
বাল্মীকি রামায়ণ অনুসারে এর বয়স আরও বেশি

নদীর উপরে আস্ত রেল স্টেশন, ভারতেই রয়েছে এই বিষ্ময়, জানুন কোথায়

উপগ্রহ চিত্র ও বিজ্ঞানীদের বক্তব্য

  • NASA ও ISRO-এর উপগ্রহ চিত্রগুলো প্রমাণ করে এটি কতটা দীর্ঘ এবং এটা এতটাই উচ্চতা দিয়ে তৈরি, যা মহাকাশ থেকেও স্পষ্ট দেখা যায়
  • কিন্তু ‘মানুষের তৈরি’ প্রমাণ করতে পর্যাপ্ত প্রমাণ এখনও নেই
  • এটি অতীতে জলের উপরে ছিল, কিন্তু সমুদ্রের জলস্তর বেড়ে যাওয়াতে এটি ডুবে গিয়েছে
  • ধর্মীয় বিশ্বাস ও স্থানীয়দের দৃষ্টিভঙ্গি
  • এটি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের কাছে পবিত্র স্থান
  • প্রতি বছর লাখ মানুষ এখানে আসেন
  • কেউ বৈজ্ঞানিক যুক্তি মানেন আবার কেউ মানেন না
  • আপনি কী মনে করেন? তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না

কী ভাবে রাম সেতু যাবেন?

ভারত থেকে রাম সেতু দেখতে গেলে রামেশ্বরম যেতে হবে।

  • ট্রেন: চেন্নাই বা মাদুরাই থেকে রামেশ্বরম পর্যন্ত রেলপথে যাওয়া যাবে
  • রাস্তা: রামেশ্বরম থেকে ধনুষ্কোডি অবধি রাস্তা আছে
  • ধনুষ্কোডি সমুদ্রের দিকে ছোট নৌকা বা স্পিডবোটে কিছুটা অংশ দেখা যায়
ram setu history
ধনুষ্কোটি থেকে মান্নার (লাল দাগ দেওয়া অংশ)

রাম সেতু একটি চিরকালীন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু — একদিকে হাজার বছরের ধর্মীয় বিশ্বাস, অন্যদিকে আধুনিক বিজ্ঞান ও রাজনৈতিক স্বার্থ।

কিন্তু এর ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক আর সাংস্কৃতিক গুরুত্ব কোনো মতেই অস্বীকার করা যায় না।

তথ্যসূত্র

Geological Survey of India Reports
National Institute of Oceanography Publications
NASA Earth Observatory
Google Earth Satellite Data
The Hindu Archives, 2007–2022
BBC News Reports on Sethusamudram Project



Discover more from Unknown Story

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply