‘বাবুমশাই’ কবিতায় শঙ্খ ঘোষ লিখেছিলেন ‘এই কলকাতার মধ্যেই আছে আর একটা কলকাতা…’। সত্যিই তো একটা শহরের দুটো রূপ, একটা দেখা যায় আর একটা খুঁজে দেখতে হয়। কেমন হয় যদি আমি বলি এই ভারতের মধ্যেই রয়েছে একটা পাকিস্তান। যেটা খুঁজে দেখতে হয়। আর এই পাকিস্তান রয়েছে বিহার রাজ্যে পূর্ণিয়া জেলায় (Pakistan Village in Bihar)।
পাকিস্তান মানে সবার আগে যেই শব্দটা অধিকাংশ ভারতীয়র মনে ভেসে ওঠে সেটা হলো শত্রু। কূটনৈতিক থেকে শুরু করে সবস্তরেই ভারত পাকিস্তান শত্রু। বয়কট, পাল্টা বয়কটের পালা চলতে থাকে। কিন্তু ভারতে এই গ্রাম পাকিস্তান নামটা বহন করে চলেছে। শুধু তাই নয়, সরকারি রেকর্ডেও রয়েছে এটি। জেনে নিন বিস্তারিত-
Table of Contents
ভারতে কী করে পাকিস্তান গ্রাম হলো (Pakistan Village in Bihar)?
১৯৪৭ সালে দেশভাগের প্রভাব পড়েছিল পূর্ণিয়া জেলার এই গ্রামেও। ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হওয়া পাকিস্তানের পূর্বভাগ যা সেই সময়ে নাম হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ), সেখানে চলে গিয়েছিলেন গ্রামের মুসলিম মানুষরা।
কিছুটা বাধ্য হয়েই নিজেদের ভিটে ছাড়তে হয়েছিল সেই গ্রামবাসীদের। যারা থেকে গিয়েছিলেন তাঁরা সেই চলে যাওয়া মানতে পারেননি। তাই চলে যাওয়া মানুষদের বিদায়ে গ্রামবাসীরা গ্রামটির নাম রাখেন পাকিস্তান।
সাচ্চা দেশপ্রেমী, এই গ্রামে প্রতি বাড়ি থেকে একজন সেনায়, চিনে নিন ভারতের আর্মি গ্রামকে
তবে দেশের মধ্যে শত্রু রাষ্ট্রে নামে একটি গ্রাম থাকলেও সেটা নিয়ে কারও কোনও হেলদোল নেই। বিশেষ করে স্থানীয় প্রশাসনের। সম্প্রতি এক ইউটিউবার তাঁর Unfiltered by Samdish চ্যানেলে একটি ভিডিয়ো শেয়ার করেন। যেখানে দেখানো হয়, গ্রামের কাঁচা রাস্তা। বৃষ্টি হলে রাস্তা আর পুকুরের মধ্যে ফারাক খুঁজে পাওয়া যায় না।
এই খারাপ রাস্তার জন্য গ্রামবাসীদের অনেকের মৃত্যুও হয়। কারণ সময়মতো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায় না।
জনসংখ্যা ও স্থানীয় সামাজিক অবস্থা
- সরকারি হিসেব অনুযায়ী, এই গ্রামের বাসিন্দা ১২০০–১৫০০ জন।
- গ্রামে অধিকাংশ মানুষ হিন্দু আদিবাসী। তাদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৩৫%।
পাকিস্তান গ্রামের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও আয়ের উৎস
- গ্রামীণ জনজীবনের প্রাথমিক আয়ের মাধ্যম হলো কৃষি। এখানকার বাসিন্দাদের অধিকাংশই কৃষক
- গ্রামবাসীদের দাবি, সরকারী সাহায্য প্রায় নেই বললেই চলে। সেচ, সার ও বীজের জন্য সরকারি অফিসে ঘুরতে হয়
- আর্থিক সমস্যার জন্য অনেকেই তাদের সন্তানকে স্কুলে পড়াতে পারেন না। এর ফলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম পুঁথিগত বিদ্য়া থেকে দূরে চলে যাচ্ছে
গ্রামের পরিকাঠামো
- গ্রামের প্রতিটা রাস্তা কাঁচা বা মাটির
- বিদ্যুৎ সংযোগ কয়েকটা বাড়িতে থাকলেও সেটা অনিয়মিত
- কোনও সরকার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা সরকারী স্কুল নেই
শিক্ষা ও স্কুলের অবস্থা
- স্কুল নেই, নেই শিক্ষকের নিয়মিত উপস্থিতি। অধিকাংশ শিশুই প্রাথমিক স্তরের পর পড়াশোনা ছেড়ে দেয়
- দিশীকা হাঁসদা নামে একজন গ্রামের একমাত্র শিক্ষিত। সে পড়েছে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত। কারও চিঠি হোক বা খবর, সেই গোটা গ্রামকে জানায়
গ্রামবাসীদের দাবি, এই সমস্যা জানা সত্ত্বেও সরকার নির্বিকার।
ভালোবাসার জন্য ভেঙেছিলেন আস্ত পাহাড়, জেনে নিন মাউন্টেন ম্যান দশরথ মানঝির গল্প
নাম পরিবর্তনের চাপ ও প্রশাসন
লম্বা চেষ্টার পর গ্রামটির নাম বদলের উদ্যোগ নেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। পাকিস্তান বদলে বীরসা নগর নাম দেওয়া হয়।
সেই হিসেবে ২০১৯ সালে গ্রামের নতুন নাম দিয়ে একটি সাইনবোর্ডও লাগানো হয়। কিন্তু আলঙ্কারিক পরিবর্তনই হয়েছে। গ্রামবাসীদের আধার বা ভোটার কার্ডে এখনও পাকিস্তান গ্রাম লেখা আছে।
ভোট আসে ভোট যায়, নিয়ম করে নেতারা গ্রামে একগাল হাসি নিয়ে গিয়ে ভোট চান। ক্ষমতায় থাকা দলের নেতা বলেন, ‘আমাকে জেতান, যেই কাজ বাকি আছে সেটা করে দেব।’ বিরোধী নেতা বলেন, ‘আমাকে জেতান আমি করে দেব।’ গ্রামবাসীরা শাসক বিরোধী এখন কারও উপরেই বিশ্বাস করেন না। আসলে প্রত্যেকবার প্রতিশ্রুতি আর সেটাকে ভাঙতে দেখে গ্রামবাসীরা হতাশ। এখনও অধিকাংশর কাছে পাকা ঘর নেই। কারও ঘরের দেওয়াল হেলে পড়েছে। সেটাকে বাঁশ দিয়ে ঠেকিয়ে রাখতে হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প পৌঁছয়নি সেই গ্রামে। গ্রামবাসীদের পাকিস্তান শব্দে আপত্তি নেই। আপত্তি ব্রাত্য থাকায়। একজন নাগরিক হয়ে, ভোটার হয়েও সরকারি পরিষেবা থেকে ব্রাত্য থাকায় আপত্তি রয়েছে তাঁদের। ছবি কি বদলাবে?
এই ঘটনাটি আপনার কেমন লাগল? কমেন্টে জানান।
তথ্যসূত্র:
Wikipedia: Pakistan village Bihar history, demographics, naming controversy
Gulf News: demands for renaming, villagers’ shame
Firstpost: detailed field report, education, livelihood, grievances
The National: identity card address issue, renaming to Birsa Nagar
Discover more from Unknown Story
Subscribe to get the latest posts sent to your email.
Leave a ReplyCancel reply