‘বসন্তি… ইন কুত্তো কে সামনে মত নাচ না!’ বিখ্যাত এই ডায়লগ বাদ পড়তে বসেছিল ‘শোলে’ সিনেমাটি থেকে? কিংবা ঠাকুর আর গব্বরের মধ্যে শেষ দৃশ্যের সেই লড়াইটা আসলে অন্যরকম ছিল? শুনলে অবাক হবেন, ৫০ বছর আগে মুক্তি পাওয়া বলিউড আইকনিক এই সিনেমার ক্লাইম্যাক্স বদলে ফেলা হয়েছিল রাতারাতি। নেপথ্যে ইন্দিরা গান্ধীর আমলে জরুরি অবস্থা।
এমারজেন্সির খাঁড়া
১৯৭৫ সালে ভারতীয় সংবিধানের ৩৫২ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করে দেশে জরুরি অবস্থার ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। সেই সময়কাল মানবাধিকার লঙ্ঘনের অধ্যায় হিসেবেই পরিচিত। কেবলমাত্র ভারতীয় রাজনীতিই নয়, বিনোদন এবং শিল্প জগতেও গভীর প্রভাব ফেলেছিল এমারজেন্সি।
সে বছরই মুক্তি পেয়েছিল বলিউডের অন্যতম আইকনিক সিনেমা শোলে। পাশাপাশি অমিতাভ বচ্চন অভিনীত দিওয়ার, সুচিত্রা সেন ও সঞ্জীব কুমার অভিনীত আঁধি কিংবা চুপকে চুপকে-র মতো সিনেমার উপরও কোপ পড়েছিল এমারজেন্সির।
শোলে-র ক্লাইম্যাক্স বদল
সেন্সরশিপের কড়া নিয়ম জারি করা হয়েছিল জরুরি অবস্থার সময়ে। মদের বোতল ভাঙা, রক্তের দাগ দেখানো দৃশ্যগুলি নিয়েও আপত্তি তোলা হত সে সময়ে। ৬টির বেশি অ্যাকশন দৃশ্য রাখার নিয়ম ছিল না। একটানা ৯০ সেকেন্ডের বেশি হিরো আর ভিলেনের মধ্যে মারপিট দেখানো নিয়েও আপত্তি ছিল ইন্দিরা সরকারের। আর এই নিয়মের বেড়াজালে ফেঁসে গিয়েছিল অমিতাভ, ধর্মেন্দ্র, সঞ্জীব কুমার, আমজাদ খান অভিনীত শোলে-ও।
ছবিটির শেষ দৃশ্যে সঞ্জীব কুমার ওরফে ঠাকুর-কে দেখা গিয়েছিল গব্বর রূপী আমজাদ খানের উপর বদলা নিতে। হাত না থাকায় পা দিয়েই গব্বরকে লাথি মারতে থাকে ঠাকুর। কিন্তু পুলিশ এসে তাঁকে মনে করিয়ে দেয়, আইন কখনও হাতে তুলে নেওয়া উচিত নয়। গব্বরকে শাস্তি দেওযার অধিকার একমাত্র আইনের। ফলে শেষ পর্যন্ত গব্বরকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় ঠাকুর।
আসল ক্লাইম্যাক্সটা কিন্তু একদম আলাদা ছিল। শুটিং হয়েছিল গব্বরকে পা দিয়েই পিষে মেরে ফেলছে ঠাকুর। কিন্তু ইন্দিরা সরকারের আপত্তিতে জরুরি অবস্থার সময়ে এই ক্লাইম্যাক্সে অনুমোদন দেয়নি সেন্সর বোর্ড। অগত্যা বাধ্য হয়েই এন্ডিং সিন চেঞ্জ করেন নির্মাতারা। পরিচালক রমেশ সিপ্পিকে অভিনেতাদের নিয়ে নতুন করে ক্লাইম্যাক্সের শুট করতে হয়ছিল।
কী কারণে আপত্তি?
সেন্সর বোর্ডের পক্ষ থেকে নির্মাতা এবং পরিচালককে জানানো হয়েছিল, প্রাক্তন পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় থাকা ঠাকুর একজন ডাকাত ওরফে গব্বরকে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে সাজা দিচ্ছেন, এই দৃশ্য মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে। জরুরি অবস্থার প্রেক্ষাপটে যা বিপজ্জনক হতে পারে। অতএব, ক্লাইম্যাক্সই বদলে ফেলার নির্দেশ আসে রমেশ সিপ্পির কাছে।
৫০ বছরে পদার্পণ করল শোলে। আর এটি জরুরি অবস্থা ঘোষণারও ৫০ বছর। এত বছর পরও শোলের আসল ক্লাইম্যাক্সে কী ছিল, তা জানা নেই অনেক সিনেপ্রেমীরও।
Discover more from Unknown Story
Subscribe to get the latest posts sent to your email.
Leave a Reply