বিশ্বাসে মিলায় বস্তু… এই শহরে চলছে দোকানি ছাড়াই দোকান


আইজ়ল থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে ছোটো গ্রাম শেলিং। পাহাড়, ঝরণা, ধানক্ষেতের ভরা ছবির মতো সুন্দর এই গ্রাম ভারতের বাকি গ্রামগুলোর থেকে একটু আলাদা।

কথিত আছে ভারতের সৎ কমিউনিটি হল মিজ়ো। সেটা এই গ্রাম দেখলেই বোঝা যায়। আর পাঁচটা গ্রামে মতো এই গ্রামেও আছে দোকান। গ্রামে ঢুকলেই দেখা যাবে সারিবদ্ধ দোকান। পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন সবজি, ফল। কিন্তু এই দোকানে নেই কোনও দোকানি। হ্যাঁ, ঠিকই দোকানদার ছাড়াই চলছে দোকান। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। স্থানীয় ভাষায় যার নাম লু এনজিএ দ্বর (nghah lou dawr) বাংলায় দোকানি ছাড়া দোকান।

চারিদিকে চুরি, রাহাজানি, ছিনতাইয়ের মধ্যে থেকে শেলিং কয়েক যোজন দূরে। এখানে ব্যবসা চলে বিশ্বাসের উপর ভর করে। কথিত আছে বিশ্বাসে মিলায় বস্তু। সেটা যেন আরও প্রকট করে শেলিং।

কেমন দেখতে দোকানগুলি?

গ্রামের এই দোকানগুলো দেখলে প্রথম দেখায় ঠিক দোকান মনে হবে না। একটি মাচা, তার উপরে একটা ছাউনি। সেই মাচায় রাখা বিভিন্ন রকম শাকসবজি, ফল। রাখা আছে একটি দামের তালিকা। সেখান থেকে নিজের প্রয়োজনমতো জিনিস কিনে যাচ্ছেন সেখানকার বাসিন্দারা। দাম? সবজির পাশে রাখা একটা করে কৌটো। যেখানে প্রয়োজনীয় দাম দিয়ে যাচ্ছেন বাসিন্দারা। খুচরো লাগলেও সেখান থেকেই করিয়ে নিচ্ছেন। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর।

শেলিংয়ের এই দোকানগুলো চালায় মূলত কৃষকরা। চাষের সবজি নিজেদের ব্যবহারের জন্য রেখে বাকিটা এই দোকানের মাধ্যমে বিক্রি করেন তাঁরা। প্রশ্ন উঠতে পারে তাহলে দোকানি নেই কেন?

কেন নেই দোকানি?

এই উত্তরটাও দিলেন গ্রামের এক কৃষক। তিনি জানান, আর্থিক দিক থেকে দুর্বল হওয়ায় দোকানি রাখা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। বাড়ির সবাই নিযুক্ত হন চাষের কাজে। ফলে দোকানি রাখার মতো লোক নেই। সেই কারণেই এই পথ।

এক কৃষক বললেন, “আমরা গ্রাহকদের বিশ্বাস করি। তাঁরা কখনও আমাদের বিশ্বাস ভাঙেননি। আমাদের দোকান থেকে আজ পর্যন্ত কিছু চুরি হয়নি।”

দোকানে কেনাকাটা খুব একটা যে বেশি হয় তা নয়। তবে যা হয় তা দিয়ে সংসার চলে যায় কৃষকদের। দোকানে পণ্যের তালিকায় রয়েছে সবজি, ফল, ফলের রস, ছোটো মাছ, শামুকের পদ (স্থানীয় খাবার)।

স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, লু এনজিএ দ্বরে যা জিনিস পাওয়া যায় তা তাদের জন্য পর্যাপ্ত। মানুষের বিশ্বাসের জন্যই এইরকম দোকান চালানো যাচ্ছে। “আমরা খুব গর্বিত যে এখানে এরকম দোকান আছে।”

দুর্নীতি, চুরির মাঝে সততার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মিজ়োরামের শেলিং গ্রামের কৃষকরা। যারা প্রমাণ করেছেন সততাই এখনও একমাত্র মূলধন।

লাইক ও ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ। ক্লিক করুন



Discover more from Unknown Story

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Exit mobile version