মন ছুঁয়ে যাওয়া ঘটনা, ভারতের এই গ্রামের সকলেই করেছেন চক্ষুদানের অঙ্গীকার


আদি কাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত শহর ও গ্রামের পার্থক্য রয়ে গিয়েছে। সময় এগিয়ে গেলেও পার্থক্য কমেনি। বরং গ্রাম থেকে শহরে মানুষের আসার প্রবণতা আরও বেড়েছে। এখন গ্রাম থেকে একাধিক মানুষ শহরে এসে পাকাপাকি বসতি গড়ছেন। এর নেপথ্যে কারণ অনেক। পেশার তাগিদ, ভালো জীবন, আধুনিকিকরণের মতো বিষয় রয়েছে। কিন্তু এই শহর বনাম গ্রামের মধ্যে এমন একটা গ্রাম আছে যা শহরকে বলে বলে গোল দিতে পারে। বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে ভারতের এই গ্রাম। যেটা দেখে সাধারণ মানুষ অনেক জিনিস শিখতেও পারবেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক-

তেলাঙ্গানার রামচন্দ্রপুর গ্রাম: এক অনন্য দৃষ্টান্ত

তেলাঙ্গানা রাজ্যের খাম্মাম জেলার রামচন্দ্রপুর গ্রাম এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। প্রায় পুরো গ্রামের মানুষ এক অসাধারণ মানবিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন — তাঁরা সকলেই মৃত্যুর পর চোখ দান করার অঙ্গীকার নিয়েছেন। এই উদ্যোগ কেবল গ্রামকে নয়, গোটা সমাজকেই নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে।

গ্রামের মানুষদের অনন্য উদ্যোগ

রামচন্দ্রপুর গ্রামের প্রায় ১৫০টি পরিবার এক হয়ে স্থানীয় এক NGO-র সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। তাঁদের লক্ষ্য একটাই — অন্ধত্ব দূর করা। গ্রামের বৃদ্ধ থেকে তরুণ — সকলেই মরণোত্তর চক্ষুদানের অঙ্গীকার করেছেন। গ্রামের যুবসমাজ এই উদ্যোগে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে।

কেন মরণোত্তর চক্ষুদানের উদ্যোগ?

গ্রামের প্রবীণ শিক্ষক রাজাইয়া গারু জানিয়েছেন, একবার তাঁর এক আত্মীয়ের দৃষ্টি শক্তি চলে যায়। সেই সময়ে তিনি উপলব্ধি করেন চোখের গুরুত্ব কতটা। সেখান থেকেই শুরু হয় সচেতনতার প্রচার। প্রথমে স্কুলের পড়ুয়াদের মধ্যে আলোচনা হয়। তারপর ধীরে ধীরে পুরো গ্রামেই ছড়িয়ে পড়ে এটি।

সচেতনতা শিবির ও ক্যাম্প

গ্রামের পঞ্চায়েত ও স্থানীয় NGO মিলিয়ে একাধিক সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করেছে। ডাক্তারদের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে, চোখ দান কীভাবে অন্ধ মানুষদের জীবনে নতুন আলো এনে দিতে পারে। গ্রামের মন্দির প্রাঙ্গণে সাইন আপ ক্যাম্পে গ্রামের মানুষ স্বেচ্ছায় নাম লিখিয়েছেন। তাদের দেখে নতুন প্রজন্মও এগিয়ে এসেছে।

অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত

রামচন্দ্রপুরের এই উদ্যোগ আজ আশপাশের গ্রামগুলোর কাছেও অনুপ্রেরণা। অনেকেই তাদের দেখানো পথে এগিয়ে এসেছে।

রামচন্দ্রপুর গ্রামের মানুষের এই উদ্যোগ আমাদের সকলের জন্য এক বড় শিক্ষা। চোখ দান মানে শুধু অন্ধত্ব দূর করা নয়, একজন মানুষের জীবনে আলো ফিরিয়ে দেওয়া। তাই আমরা প্রত্যেকেই যদি এই দায়িত্ব নিতে পারি, তাহলে অন্ধত্বমুক্ত সমাজ গড়া আর স্বপ্ন নয় — বাস্তব সত্যি।



Discover more from Unknown Story

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Exit mobile version