খাতায় কলমে ভারতের কোনও জাতীয় খেলা না থাকলেও হকিকেই জাতীয় খেলার মর্যাদা দেওয়া হয়। ইতিহাসের পাতা ওল্টালে দেখা যাবে ক্রিকেটের থেকেও হকির প্রভাব অনেকটাই বেশি। তবে অতীতে ভারতীয় হকি সেই গৌরব ধরে রাখতে পারেনি। এখন কিছুটা হলেও সেই গৌরব ফিরেছে। গত কয়েক বছরে ভারতের মহিলা ও পুরুষ হকিতে পরিবর্তন এসেছে। এই প্রতিবেদনে জেনে নিন ভারতীয় হকির (Indian Hockey) অতীত ও বর্তমান যুগ।
Table of Contents
ব্রিটিশ আমল ও ভারতে হকির সূচনা
ফুটবলের মতো হকিও ভারতে শুরু হয় ইংরেজদের হাত ধরে।
১৮৮৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম হয় হকি খেলা। এর পর থেকেই হকি ধীরে ধীরে দেশের বাকি অংশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
তবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভারত অংশগ্রহণ শুরু করে ১৯২৮ সালে আমস্টারডাম অলিম্পিকে।
এ সময়ে ভারত থেকে প্রথম সারিতে হকি খেলতেন বলবীর সিং সিনিয়র, কিষান লাল ও কোচ হারবইল সিং। এদের হাত ধরেই তখন ভারত হকিতে দাপট দেখাতে থাকে।
১৯২৮, ১৯৩২, ১৯৩৬, ১৯৪৮, ১৯৫২ ও ১৯৫৬ সালের অলিম্পিকে সোনা জেতে ভারতের পুরুষ হকি দল।
সালগুলোর দিকে দেখলে দেখতে পাবেন ধারাবাহিকতা রয়েছে। এই সময়টাতে বলা হয় ভারতীয় হকির সোনালি যুগ।
কিংবদন্তি ধ্যানচাঁদের উত্থান
- ধ্যানচাঁদ হলেন ভারতীয় হকির সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র
- ১৯৩৬ সালের বার্লিন অলিম্পিকে জার্মানিকে ভারত ৮‑১ গোলে হারায়। এর মধ্যে ধ্যানচাঁদ নিজেই তিনটি গোল করেন
- বল নিয়ে তাঁর দৌড় দেখে বলা হতো তাঁর হকির স্টিকে যেন বল আটকে রয়েছে
- তার স্মরণে পরবর্তীতে ২৯ অগস্ট ‘জাতীয় ক্রীড়া দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়
সাদা থেকে রংচংয়ে জার্সি, সময়ের সঙ্গে কীভাবে বদলে যাচ্ছে ক্রিকেট
স্বাধীনতার পর ভারতীয় হকির (Indian Hockey) যাত্রা
স্বাধীনতার পরে অবশ্য হকির (Indian Hockey) ছবিটা বদলাতে থাকে। সাফল্যের ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়। একের পর এক ম্য়াচে হার, নতুন কিছু করার চ্যালেঞ্জ ভারতীয় হকিকে পিছনের দিকে ঠেলে দেয়।
তবুও এই সময়ে কিছু উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে:
- ১৯৬৪: টোকিও অলিম্পিকে সোনা
- ১৯৬৮ ও ১৯৭২: অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ
- ১৯৮০: মস্কো অলিম্পিকে সোনা জয়
এই পর্বেও ভারতীয় হকিতে উত্থান হয় পারভিন জোহর, ভৃপিন্দর পালের।
Indian Hockey-র পতন ও কামব্যাক
২০০০-এর দশকে Indian Hockey চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে।
ইউরোপীয় দলগুলোর উন্নতির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছিল না ভারতীয় হকি। টার্ফ, উন্নত কৌশল ও প্রযুক্তির মাধ্যমে অনেক এগিয়ে যাচ্ছিল ইউরোপ।
এই পরিস্থিতিতে ত্রাতার ভূমিকায় আসে ওডিশা সরকার। তাদের সহায়তায় হকি নতুন করে পথচলা শুরু করে। উন্নতমানের পরিকাঠামো, আধুনিক প্রযুক্তি, কোচ সব মিলিয়ে তৈরি করা হয় হকি দলকে।
যার ফল হচ্ছে ২০২১ সালের টোকিও অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ জয়। এর ব্রোঞ্জের মধ্যে দিয়ে ৪১ বছর পরে পুনরায় অলিম্পিকে পদক জেতে ভারত।
এছাড়াও ২০২৩ এশিয়ান গেমস ও এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয় ভারতের পরিচিতি ফের পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে।
এর পর ২০২৪ সালে প্যারিস অলিম্পিকেও ব্রোঞ্জ জেতে ভারতের পুরুষ দল।
লর্ডস স্টেডিয়ামে ৮ ফুটের ঢালেই খেলা হয় ম্যাচ, জানুন এর নেপথ্যে কারণ ও ইতিহাস
ওডিশা: ভারতীয় হকির কেন্দ্র
বর্তমানে ওডিশা হকির উন্নয়নের এগিয়ে আছে। নবীন পট্টনায়েক মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি ক্রিকেট, ফুটবলের দিকে ফোকাস না করে হকির দিকে নজর দেন।
স্বচ্ছতা, আর্থিক সহায়তা ও পরিকাঠামোর ভার নিজের কাঁধে নেয় ওডিশা সরকার।
২০১৯ সালে ওডিশা নেভাল টাটা হকি হাই পারফরম্যান্স সেন্টার চালু হয়।
বীরসা মুন্ডা ও বিজু পটনায়েক হকি স্টেডিয়ামকে অন্যতম সেরা হকি স্টেডিয়াম হিসেবে তৈরি করা হয়।
FIH র্যাঙ্কিং ও ভারতের বর্তমান অগ্রগতি
২০২৫ সালে ভারতীয় পুরুষ দল FIH র্যাঙ্কিংয়ে পঞ্চম স্থান অধিকার করে।
মহিলা দল নবম স্থানে রয়েছে যা উল্লেখযোগ্য উন্নতি।
হকি লিগ ও ফ্র্যাঞ্চাইজি সংস্করণ
হকির উন্নতির পিছনে অন্যতম অবদান রয়েছে হকি ইন্ডিয়া লিগের। এটি শুরু হয় ২০১৩ সালে। এর পর সেটা ২০১৮ সালে বন্ধ হয়ে যায়। ২০২৪-২৫ সালে এটি পুনরায় চালু হয়।
চলছে ২২৫ বছর ধরে, কেন উইম্বলডনে সাদা পোশাক পরেন খেলোয়াড়রা?
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও পরিকল্পনা
- ২০২৬ ও ২০৩০ সালে FIH বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে
- AI-ভিত্তিক পারফরম্যান্স অ্যানালিটিক্স
- জাতীয় কোচিং সিস্টেমে ইউথ র্যাঙ্ক মডেল এবং বেশি করে অ্যান্টি-ডোপিং সেগমেন্ট যুক্ত হচ্ছে
Indian Hockey ইতিহাসে সোনালি যুগ কেবল সাফল্য নয় এটি ছিল জাতীয় অহংকার, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। আজ আধুনিক প্রশিক্ষণ, বিশ্বমানের স্টেডিয়াম, শক্তিশালী ফেডারেশন ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির কারণে ভারতীয় হকি আবার উঠে আসছে।</p>
তথ্যসূত্র:
Olympics.com
creelonline.com
Wikipedia
NDTV
India Today
sportskeeda.com
Discover more from Unknown Story
Subscribe to get the latest posts sent to your email.
Leave a Reply