Kolkata Derby: 1921 থেকে 2025, ইতিহাসের পাতায় দেখে নিন বাঙালির আবেগের বড় ম্যাচ

কলকাতা ডার্বির স্মরণীয় ঘটনা Kolkata Derby

কলকাতা ফুটবল কথাটা উঠলে সবার আগে আসবে কলকাতা ডার্বির কথা (Kolkata Derby)। ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের মধ্যে লড়াই। সাদা কালো টিভি থেকে হালফিলে স্মার্ট টিভির যুগেও এই দুই দলের মধ্যে লড়াইয়ে উন্মাদনায় ভাটা পড়েনি। স্বাধীনতার আগে থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ডার্বি মানে কার্যত বঙ্গভঙ্গের আকার নেওয়া। রাজ্যের বাইরেও ডার্বির উত্তাপ পড়ে, বেঙ্গালুরু থেকে মুম্বই, নিউ দিল্লি থেকে নিউ জার্সি সবেতেই চলে উন্মাদনা।

কলকাতা ডার্বির বয়স ১০০ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। এই ১০০ বছরেরও বেশি সময়ে একাধিক স্মরণীয় ঘটনার সাক্ষী থেকেছে ময়দান। কিছু ঘটনা ভালো আবার কিছু ঘটনা ভুলে যাওয়ার মতো। এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো কলকাতা ডার্বির কয়েকটি স্মরণীয় ঘটনা।

ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের প্রথম সাক্ষাৎ

১৮৮৯ সালে মোহনবাগানের পথচলা শুরু আগ ইস্টবেঙ্গলের শুরু ১৯২০ সালে। বয়সে অনেক ছোট হলেও ইস্টবেঙ্গল সমানে সমানে টক্কর দিয়েছে। দুই দল প্রথমবার একে অন্যের মুখোমুখি হয় ১৯২১ সালে। ৮ অগস্ট কোচবিহার কাপে প্রথমবার দুই দল নামে ও ম্যাচ গোলশূন্য ড্র হয়।

১০ অগস্ট ফিরতি ডার্বি ৩ গোলে জেতে মোহনবাগান।

প্রথম লিগের ম্যাচ

কলকাতা লিগে প্রথমবার দুই দল নামে ১৯২৫ সালের ২৮ মে। নেপাল চক্রবর্তীর গোলে ১-০ তে ম্যাচ জিতে নেয় ইস্টবেঙ্গল।

Kolkata Derby ১৯৭৫: ইস্টবেঙ্গলের বড় জয়

বিশ্বে যতদিন ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান থাকবে, ততদিন এই ম্যাচটা থাকবে। IFA শিল্ড ফাইনালে মোহনবাগানকে ৫-০ গোলে হারিয়ে দিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। সুরজিৎ সেনগুপ্ত, শ্যাম থাপা (২), রঞ্জিত মুখোপাধ্যায়, শুভঙ্কর সান্যাল গোল করেন।

৫-০ গোলের বদলা এখনও হয়নি। কারণ মোহনবাগান ৫-৩ গোলে জিতলেও শূন্য হয়নি। সেই ম্যাচের পর মোহনবাগানের তৎকালীন গোলরক্ষক ভাষ্কর গাঙ্গুলি খেলে ছেড়ে দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন, কিন্তু সেই সময়ে তাঁকে ইস্টবেঙ্গল কর্তা ও সতীর্থরা বাধা দেন।

সোনালি যুগ থেকে বর্তমান সময়, ভারতীয় হকির উত্থান-পতনের গল্প

ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের কাছে যেই ডার্বি ঐতিহাসিক সেই ডার্বি আবার কলকাতা ময়দানে সমর্থকদের জন্য খারাপ। ইস্টবেঙ্গলের কাছে হারের পর মোহনবাগান সমর্থক উমাকান্ত পালোধী আত্মহত্যা করেন। দলের হার সহ্য করতে না পেরে নিজেকেই শেষ করে দেন।

কলকাতা ডার্বিতে মোহনবাগানের ইতিহাস

তবে ১৯৭৫ সালের পারফেক্ট বদল না হলেও মোহনবাগান পাল্টা দিয়েছিল। ১৯৭৬ সালে ডার্বিতে মাত্র ১৬ সেকেন্ডে গোল করেছিলেন মহম্মদ আকবর। উলগানাথনের ক্রস থেকে গোল করেন। এটাই এখনও পর্যন্ত ডার্বির ইতিহাসে সবচেয়ে কম সময়ে করা গোল।

ডার্বির ইতিহাসে কালো দিন

১৯৮০ সালের ১৬ অগস্ট। তখন ইডেন গার্ডেন্সে ক্রিকেটের পাশাপাশি ফুটবলও হতো। সেই ইডেনে দুই দলের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে গ্যালারিতে। বল দখলের লড়াইকে কেন্দ্র করে ঝামেলা হয়। ঘটনায় প্রাণ হারান ১৬ জন সদস্য।

ইতিহাসের পাতায় কলকাতা ডার্বি

এই একটাদিন কলকাতা সহ গোটা বাংলা কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে মোবাইলে খেলা দেখা যাওয়ায় রাস্তায় চলতে চলতে খেলা দেখেন। তবে অতীতে এই সুযোগটা না থাকায় সবাই মাঠেই যেতেন।

১৯৯৭ সালের ১৩ জুলাই ডার্বি একটি ইতিহাস করল। যুবভারতীতে খেলা দেখতে এসেছিলেন ১ লাখ ৩১ হাজার দর্শক। ইস্টবেঙ্গল সেই ম্যাচে জেতে ৪-১ গোলে। বাইচুং ভুটিয়া হ্যাটট্রিক করেন।

বলা হয় সেই ম্যাচের আগে মোহনবাগানের তৎকালীন কোচ প্রয়াত অমল দত্তের মন্তব্যে ইস্টবেঙ্গল প্লেয়াররা তেতে গিয়ে এই কাণ্ড ঘটনা। এখনও পর্যন্ত এই দর্শক সংখ্যার রেকর্ড ভাঙেনি।

বয়স ১৩৪ বছর, কী ভাবে ও কেন শুরু হলো ডুরান্ড কাপ?

ইস্টবেঙ্গলের কামব্যাক

এর পর ইস্টবেঙ্গলের টানা খারাপ সময় চলতে থাকে। একের পর এক ম্য়াচে হারতে হয় তাদের। অবশেষে ২০০৯ সালে জয় আসে। ২২ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত কোচ সুভাষ ভৌমিকের কোচিংয়ে ৩-০ গোলে জেতে ইস্টবেঙ্গল। জোড়া গোল করেছিলেন রহিম নবি ও একটি করেন সুনীল ছেত্রী।

মোহনবাগানের কামব্যাক

সেই বছরের ২৫ অক্টোবর। ইতিহাসের পাতায় আরও একট ডার্বি। ইস্টবেঙ্গলকে ৫-৩ গোলে হারাল ইস্টবেঙ্গল। হ্যাটট্রিক করেন চিডি এডে। মোহনবাগান সমর্থকরা এটাকে ৫-০ র বদলা বললেও অনেকে মানতে চান না।

অগ্নিগর্ভ যুবভারতী, মাথা ফাটল রহিম নবির

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর। আরও এক খারাপ ডার্বির ছবি। রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতিবাদ করে লাল কার্ড দেখেন মোহনবাগানের ওডাফা ওকোলি। তার আগে থেকেই তেতেছিলেন সমর্থকরা। ওডাফার লাল কার্ডের পর পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়।

গ্যালারি থেকে ইট, পাথর ছুঁড়তে থাকে সমর্থকদের একাংশ। একই ইটের আঘাতে মাথা ফাটে মোহনবাগানের রহিম নবির। এর পর মোহনবাগান রেফারির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে ম্যাচ বয়কট করে। ইস্টবেঙ্গলকে ম্যাচের পয়েন্ট দেওয়া হয়।

এই সিদ্ধান্তের পর মোহনবাগানকে সাসপেন্ড করতে পারত AIFF। সেই যাত্রায় টুটু বসু ২ কোটি টাকা জরিমানা দিয়ে সাসপেনশন আটকান। এই দিনটাকে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা পলায়ন দিবস বলে মোহনবাগান সমর্থকদের কটাক্ষ করে।

লর্ডস স্টেডিয়ামে ৮ ফুটের ঢালেই খেলা হয় ম্যাচ, জানুন এর নেপথ্যে কারণ ও ইতিহাস

ইস্টবেঙ্গল ৪, মোহনবাগান ০

আরও একটা ৫-০ গোলের আশঙ্কা ছিল। ২০১৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর কলকাতা লিগে ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান ম্যাচ লাল হলুদ জেতে ৪-০ গোলে। ডো ডং হিউং বিশ্বমানের দুটো ফ্রি কিক থেকে গোল করেন। রফিক ও রাহুল ভেকে আরও একটা করে গোল করেন। এই ম্যাচে ডং আরও একটা গোলের সুযোগ মিস করেছিল, সেটা না হলে আরও একটা ৫-০ দেখা যেত।

আরও একটা ৫-০ গোলের আশঙ্কা ছিল। ২০১৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর কলকাতা লিগে ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান ম্যাচ লাল হলুদ জেতে ৪-০ গোলে। ডো ডং হিউং বিশ্বমানের দুটো ফ্রি কিক থেকে গোল করেন। রফিক ও রাহুল ভেকে আরও একটা করে গোল করেন। এই ম্যাচে ডং আরও একটা গোলের সুযোগ মিস করেছিল, সেটা না হলে আরও একটা ৫-০ দেখা যেত।

kolkata derby history
গত ডার্বির ছবি

ডার্বির তারকা কিয়ান নাসিরি

ISL-এ ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান দুই দল নাম লেখানোর পর থেকে ইস্টবেঙ্গল পিছনের দিকে যেতে থাকে। একের পর এক ম্যাচ জেতে মোহনবাগান। ATK মোহনবাগান থেকে মোহনবাগান সুপরার জায়ান্ট নাম হলেও তাদের দাপট কমেনি।

সেই রকমই ২০২২ সালের ২৯ জানুয়ারি ISL ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলকে ৩-১ গোলে হারায় মোহনবাগান। ম্যাচের অধিকাংশ সময়ে ইস্টবেঙ্গল ১ গোলে এগিয়ে ছিল। পরিবর্ত হিসেবে নেমে কিংবদন্তী জামশেদ নাসিরির ছেলে কিয়ান নাসিরি হ্যাটট্রিক করে দলকে জেতান। সঙ্গে তিনি তরুণ প্লেয়ার হিসেবে ডার্বিতে হ্যাটট্রিক করার নজির করেন।

ব্রিটিশদের থেকে বল কেড়ে বাঙালিকে ফুটবল খেলা শেখান নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী

বর্তমানে ডার্বিতে লেগেছে কর্পোরেটের ছোঁয়া। ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান দুই দলই চালাচ্ছে কর্পোরেট সংস্থা। ফলে আরও আধুনিক হয়েছে এই লড়াই। কিন্তু কোথাও গিয়ে প্লেয়ারদের মধ্যে ডার্বি নিয়ে আবেগ কমেছে। এর অন্যতম কারণ অবশ্যই দুই দলে বাঙালি প্লেয়ার কমে আসা এবং বিদেশি কোচদের বাড়বাড়ন্ত। ফলে ডার্বির আগে যে রক্ত গরম করা অবস্থা থাকত প্লেয়ারদের সেটা এখন আর নেই।

তবে সমর্থকরা আছেন। তাঁরা এখনও ডার্বির আগে লাইন দিয়ে টিকিট কাটেন। প্রিয় দলের জার্সি গায়ে স্টেডিয়ামে যান, ঝগড়া করেন, গলা ফাটান। এ ভাবেই বেঁচে আছেন বাঙালির আবেগের ডার্বি, আবেগের বড় ম্যাচ।

তথ্যসূত্র:
I‑League Kolkata Derby history
i-league.org
ESPN.com
Olympics.com
Goal.com
Scroll.in



Discover more from Unknown Story

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply