আপনি যদি কলকাতার বাসিন্দা হন বা কলকাতার ব্যাপারে জেনে থাকেন, তা হলে শহিদ মিনার নামটা আপনি নিশ্চই শুনেছেন। কলকাতা সহ ভারতের ইতিহাসে শহিদ মিনার নামটা জুড়ে রয়েছে। কেন তৈরি হলো এই শহিদ মিনার? কে বা কারা তৈরি করল? বর্তমানে এটির ভূমিকা কী? এই প্রতিবেদনে জেনে নিন কলকাতার ধর্মতলায় দাঁড়িয়ে থাকা শহিদ মিনারের ইতিহাস (Shaheed Minar Kolkata history)।
Table of Contents
শহিদ মিনারের ইতিহাস (Shaheed Minar Kolkata history)
১৮২৮ সলে এটি তৈরি করে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বা ইংরেজরা। সালটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে, সেই সময়ে ছিল ইংরেজদের রাজত্ব। শুরুতে এটির নাম ছিল Ochterlony Monument. এটা মেজর জেনারেল স্যর ডেভিড অক্টোরলোনিকে উৎসর্গ করে তৈরি করা হয়। ১৮০৪ সালে গোর্খা ও অ্যাংলো নেপলেস যুদ্ধে দিল্লি দখল হওয়ার হাত থেকে তিনি বাঁচিয়েছিলেন, সেই কারণে ব্রিটিশ সরকার এই অক্টোরলোনিক মনুমেন্ট তৈরি করে।
কে তৈরি করেছিলেন শহিদ মিনার?
স্থপতিবিদ জেপি পারেখ ছিলের এটি তৈরির নেপথ্যে। নকশার মধ্যে রয়েছে মিশরের ফোয়ারা, সিরিয়ান থাম্প, ও তুরষ্কের ডোম। অর্থাৎ, এই তিনটে দেশের কারুকার্য ব্যবহার করা হয়েছে এটি বানাতে।
কী করে Ochterlony Monument থেকে এটির নাম শহিদ মিনার হলো?
১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর ১৯৬৯ সালের ৯ অগস্ট তৎকালীন ভারত সরকার এই Ochterlony Monument-এর নাম বদলে রাখে শহিদ মিনার। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উৎসর্গ করে এটির নাম বদল করা হয়।
শহিদ মিনারের উচ্চতা
আমেরিকার লেখক মার্ক টোয়েন (Mark Twain) এটিকে Cloud-kissing monument বা মেঘচুম্বী মিনার বলে বর্ণনা করেছেন এটির উচ্চতার জন্য। এটির উচ্চতা ১৫৭ ফিট বা ৪৮ মিটার।
শহিদ মিনারে ওঠা যায়?
আসলে এটা বাইরে থেকে একটা থাম্ব মনে হলেও এটির ভিতরে প্রবেশ করা যায়। একটা সময় পর্যন্ত সাধারণকে প্রবেশ করতে দেওয়া হতো। শহিদ মিনারের নিচ থেকে উপরে যাওয়ার জন্য রয়েছে ২১৮ থেকে ২২৩টা সিঁড়ি। যদিও একদম উপর পর্যন্ত যেতে দেওয়া হতো না নিরাপত্তার জন্য।
তবে ২০১১ সালে রাজ্য সরকার এটিকে সংষ্কার করার পর দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ করে দেয়। ফলে ৪৮ মিটার উঁচু জায়গা থেকে শহর দর্শনের মজা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষরা।
বিশেষজ্ঞরা জানান, ২০১১ সালে আগে শহিদ মিনার রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভুগছিল। সেটাকে রক্ষণাবেক্ষণ শুরু করার পর তাতে মানুষের চাপ পড়লে হিতের বিপরীত হবে। সেই কারণে এটিকে বন্ধ করার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন অনেকে (Shaheed Minar Kolkata history)।
ডেকার্স লেন: রাস্তা নয়, কলকাতার স্ট্রিট ফুড স্বর্গ
শহিদ মিনার ও রাজ্য রাজনীতি
এটা বুঝতে গেলে আপনাকে বুঝতে হবে শহিদ মিনারের অবস্থান। শহিদ মিনার বা অনেকের কাছে যেটা মনুমেন্ট সেটা অবস্থিত কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ডের ঠিক পাশেই। মনুমেন্টে যেতে গেলে আপনি ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ডের ভিতর দিকে হেঁটে আসতে পারে, আবার ক্যালকাটা স্পোর্টস জার্নালিস্ট ক্লাবের সামনে দিয়ে হেঁটে যেতে পারেন।
শহিদ মিনার থেকে ব্রিগেড ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে। এ ছাড়াও শহিদ মিনারের পাশে রয়েছে বিশাল বড় খালি জায়গা। এর একটা অংশ ব্যবহার করে হাওড়া ইউনিয়ন ও ভবানীপুর ক্লাব। বাকি অংশটা ব্যবহৃত হয় মিছিল র্যালির জন্য। ফলে বছরের অধিকাংশ সময়ে শহিদ মিনার চত্বরে মিছিল, বিক্ষোভ চলতেই থাকে। প্রতিটা রাজনৈতিক দল বা নেতানেত্রী এখানে একবার হলেও বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
তবে শহিদ মিনারে প্রথম রাজনৈতিক বিক্ষোভ দেখান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯৩১ সালে তিনি একটি সমাবেশে নেতৃত্ব দেন।
বর্তমানে শহিদ মিনারের ব্যবহার
বর্তমানে শহিদ মিনার একটা আকর্ষণ হয়ে রয়েছে। বিশেষ দিনে রাজ্য সরকার এটিতে আলো জ্বালায়। শহিদ মিনারের চারপাশটা লোহার গ্রিল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। তারমধ্যে রয়েছে বিভিন্নরকমের গাছে। মিনারের পাশে রয়েছে বসার বেঞ্চ। দুপুরে অনেকে এখানে বিশ্রাম নেন।
তবে সাধারণ মানুষের হাতে নোংরা হচ্ছে শহিদ মিনার। যেহেতু এর পাশে অনেকে বিশ্রাম নেন তাই তাদের জন্যই নোংরা হয়। ময়লা, থুতু, সিগারেট ফেলা চলতেই থাকে। এরসঙ্গে অনেকে শহিদ মিনারের পাশে বাথরুম, পায়খানা করে নোংরা করেন। দিনের শেষে মানুষের মধ্যে শুভবুদ্ধির উদয় না হলে এগুলো বাঁচিয়ে রাখা যাবে না।
Pakistan Village in Bihar: ভারতের মধ্যে রয়েছে এক টুকরো পাকিস্তান, জানুন ইতিহাস
কীভাবে কলকাতা শহিদ মিনারে যাবেন?
কলকাতা মেট্রোতে এসপ্ল্যানেড স্টেশনের যেকোনও গেট থেকে বেরোলে ২০০-৩০০ মিটার হাঁটলেই পাবেন শহিদ মিনার।
বাসে করে গেলে আপনাকে ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে। প্রতিটা বাসই সেখান দিয়ে যায়।
শহিদ মিনার শুধু ব্রিটিশদের একটি মাইলফলক নয় (Shaheed Minar Kolkata history), এটি কলকাতার ইতিহাসে ব্রিটিশ সময়কাল থেকে স্বাধীনতা পর্যন্ত সংষ্কৃতির বদলের একটা প্রমাণ। এখানে যেমন আছে যুদ্ধজয়ের ইতিহাস, তেমনই রয়েছে দেশের জন্য প্রাণ দেওয়া স্বাধীনতা সংগ্রামীদের রক্ত। আবার বর্তমানে এখানে রয়েছে স্লোগান, র্যালি, রাজনৈতিক পতাকা। সব মিলিয়ে শহিদ মিনার একটা আস্ত ইতিহাস। তাই আপনি কলকাতা ঘোরার প্ল্যান করলে একবার শহিদ মিনারে এসে ঘুরে দেখতেই পারেন।
FAQ of Saheed Minar Kolkata
শহিদ মিনার কোথায় অবস্থিত?
কলকাতার ধর্মতলা বাসস্ট্য়ান্ডের পাশে অবস্থিত শহিদ মিনার।
শহিদ মিনারের উচ্চতা কত?
১৫৭ ফিট বা ৪৮ মিটার
শহিদ মিনার কে তৈরি করেন?
স্থপতিবিদ জেপি পারেখ ছিলের এটি তৈরির নেপথ্যে। নকশার মধ্যে রয়েছে মিশরের ফোয়ারা, সিরিয়ান থাম্প, ও তুরষ্কের ডোম। অর্থাৎ, এই তিনটে দেশের কারুকার্য ব্যবহার করা হয়েছে এটি বানাতে।
শহিদ মিনারের ইতিহাস
১৮২৮ সলে এটি তৈরি করে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বা ইংরেজরা। সালটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে, সেই সময়ে ছিল ইংরেজদের রাজত্ব। শুরুতে এটির নাম ছিল Ochterlony Monument. এটা মেজর জেনারেল স্যর ডেভিড অক্টোরলোনিকে উৎসর্গ করে তৈরি করা হয়। ১৮০৪ সালে গোর্খা ও অ্যাংলো নেপলেস যুদ্ধে দিল্লি দখল হওয়ার হাত থেকে তিনি বাঁচিয়েছিলেন, সেই কারণে ব্রিটিশ সরকার এই অক্টোরলোনিক মনুমেন্ট তৈরি করে।
কী করে যাবেন শহিদ মিনার?
কলকাতা মেট্রোতে এসপ্ল্যানেড স্টেশনের যেকোনও গেট থেকে বেরোলে ২০০-৩০০ মিটার হাঁটলেই পাবেন শহিদ মিনার।
বাসে করে গেলে আপনাকে ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে। প্রতিটা বাসই সেখান দিয়ে যায়।
শহিদ মিনার দেখতে টাকা লাগবে?
না। বিনামূল্যে দেখা যায়। কিন্তু প্রবেশ করা যায় না।
Discover more from Unknown Story
Subscribe to get the latest posts sent to your email.
Leave a ReplyCancel reply