China AI Technology: বিশ্বজুড়ে এক থ্রেট ও ভারতে এর প্রভাব

details of China AI Technology

বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলোর মধ্যে ইউরোপের দেশ ও আমেরিকার সঙ্গেই উচ্চারিত হয় চিনের নাম। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রতি মুহূর্তের চিনা সামগ্রী আমাদের সঙ্গে যুক্ত। অতীতে চিনা মোবাইল হাসির পাত্র হলেও এখন অ্যাপল, স্যামসং আর কয়েকটা ছাড়া চিনের বাইরের কোনও সংস্থা নেই। এই চিন ধীরে ধীরে তাদের প্রযুক্তির উন্নতি করে গ্রাস করছে পুরো সাইবার জগতকে। ছড়িয়ে পড়ছে চিনা AI বা China AI Technology.

এই প্রতিবেদনে জেনে নিন চিন কী ভাবে ও কেন AI ব্যবহার করে নজরদারি চালাচ্ছে।

যেই দেশ ধর্ম বা অন্য বিষয়কে দূরে রেখে প্রযুক্তির দিকে বেশি বিনিয়োগ করে সেটা চিন। আজ থেকে প্রায় ১৫ বছর আগে থেকে চিন এটা করে আসছে। গ্রাসরুট লেভেল থেকে এই কাজটা শুরু করার ফল এখন তারা পাচ্ছে। তাদের অন্যতম শক্তি AI ও স্পাই প্রযুক্তি।

২০১৭ সালে চিনা সরকার একটি ঘোষণা করে। জানানো হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে চিন হবে বিশ্বের AI সুপার পাওয়ার। সেই লক্ষ্যে শুরু হয় বিপুল বিনিয়োগ, রিসার্চ ও বাস্তবায়ন।

চিনের নজরদারি প্রযুক্তির বিস্তারও একইভাবে চমকে দেওয়ার মতো। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে ফেস রেকগনিশন থেকে শুরু করে মোবাইল ট্র্যাকিং, স্যোশাল মিডিয়া স্ক্যানিং সবকিছুতেই নজরদারির প্রযুক্তির ব্যবহার করছে ভারতের এই পড়শি দেশ।

Table of Contents

কীভাবে China AI Technology ব্যবহার করছে?

চিনের AI প্রযুক্তি শুধু রোবট বা ডেটা বিশ্লেষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি সমাজের প্রতিটি স্তরে প্রবেশ করেছে।

ফেস রেকগনিশন সিস্টেম

চিনে ফেসিয়াল রেকগনিশন ক্যামেরা বসানো হয়েছে স্কুল, হাসপাতাল, রেলস্টেশন, ট্র্যাফিক সিগনালসহ প্রায় সব জায়গায়। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে তারা নাগরিকদের চলাফেরা রেকর্ড করে।

ফলে কেউ প্রকাশ্যে কোনও ক্রাইম করে ছাড়া পেতে পারেন না। কয়েক সেকেন্ডে সেই ব্যক্তির ডেটা চলে আসে পুলিশের কাছে।

ফেসবুক থেকেও ছড়াতে পারে বিপদ, অনলাইনে সেফ থাকবেন কী ভাবে?

সোশ্যাল ক্রেডিট সিস্টেম

এটি চিনের অন্যতম আলোচিত AI সিস্টেম। অনলাইন ও অফলাইনে নাগরিকদের আচরণ বিশ্লেষণ করে তাদের ‘সোশ্যাল স্কোর’ নির্ধারণ করা হয়। স্কোরের উপর ভিত্তি করে সেই নাগরিকের চাকরি, ঋণ পাওয়া। বলা যায় সেটা একটা প্রোফাইলের মতো যেটা আচরণের উপর ঠিক হয়।

স্মার্ট সিটি প্রজেক্ট

চিনের বেশ কিছু শহরে AI চালিত ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট, নিরাপত্তা ও নাগরিক পরিসেবা চালু হয়েছে। এই প্রকল্পগুলির মাধ্যমে সরকার নাগরিকদের প্রতিদিনের জীবনযাপনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে। পাশাপাশি প্রযুক্তিনির্ভর হওয়াতে মানুষ কম লাগছে, এতে জনবিস্ফোরণ হচ্ছে না।

development of ai in china

চিনের স্পাই প্রযুক্তির অগ্রগতি

চিনের হাতে সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র হচ্ছে তাদের গোয়েন্দা প্রযুক্তি। এই নজরদারি শুধু নিজেদের নাগরিকদের উপর সীমাবদ্ধ নয়। আন্তর্জাতিক স্তরেও চিন সন্দেহজনক কার্যকলাপে জড়িত।

বলা হয়, এই নজরদারির কাজে চিন তাদের একাধিক অ্যাপকে কাজে লাগায়। যেই কারণে ভারতে একাধিক চিনা অ্যাপ ব্যানড। তালিকায় টিকটক, হেলোর মতো জনপ্রিয় অ্যাপ রয়েছে।

TikTok ও ডেটা কালেকশন বিতর্ক

বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় এই অ্যাপকে ঘিরে অভিযোগ উঠেছে যে এটি ব্যবহারকারীদের ডেটা গোপনে চিনের সার্ভারে পাঠায়। আমেরিকা, ভারত সহ বহু দেশ এই কারণে TikTok-কে নিষিদ্ধ করেছে বা তাদের ক্ষমতা খর্ব করেছে।

Huawei ও 5G বিতর্ক

হুয়েইকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিকস্তরে একাধিক সমস্যা তৈরি হয়েছে। নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অনেকে মনে করেন হুয়েইয়ের 5G নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে চিন নজরদারি চালাতে পারে। আমেরিকা ও ইংল্য়ান্ড এই কোম্পানিকে তাদের 5G প্ল্যান থেকে বাদ দিয়েছে। পাশাপাশই এই কোম্পানি অ্যান্ড্রয়েড বা iOS অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করতে পারে না। তাদের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম আছে এবং আলাদা অ্যাপ স্টোর আছে।

ভারতের কাছে চিনা প্রযুক্তি কতটা চিন্তার?

সীমান্তবর্তী নজরদারি

চীন ভারতের সীমান্তে বিশেষভাবে নজরদারি বৃদ্ধি করেছে। লাদাখ অঞ্চলে ড্রোন ও সেন্সর বসিয়ে নজর রাখছে।

মোবাইল অ্যাপ ও ডেটা চুরি

ভারতের কোটি কোটি মানুষ চিনা অ্যাপ ব্যবহার করতেন, যেগুলোকে কেন্দ্র করে জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। সেই কারণেই ভারত সরকার প্রায় ২৫০-র বেশি চিনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছে।

ছোট দেশগুলোর ভরসা, যুদ্ধে কী ভাবে গুরুত্ব বাড়ছে ড্রোনের?

ডেটা-সর্বস্ব যুদ্ধ

বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে সেটা হবে ডেটার যুদ্ধ। এই লড়াইয়ে যেই দেশ বেশি শক্তিশালী তারাই জিতবে। তাই চিনের প্রযুক্তিগত ক্ষমতা ভারতের মতো দেশের কাছে থ্রেট হতে পারে।

কীভাবে এত শক্তিশালী হলো চিন?

সরকারি বিনিয়োগ ও স্ট্র্যাটেজি

চিনে কোনও বিরোধী সরকার নেই। একনায়ক হওয়ায় চিনের কমিউনিস্ট সরকার নিজেদের মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কমিউনিস্ট সরকার সরাসরি AI ও নজরদারি প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করে।

টেক কোম্পানিগুলোর সহযোগিতা

চিনের নিয়ম রয়েছে বেসরকারি সংস্থাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার। এই কারণে Alibaba, Tencent, Baidu, Huawei-এর মতো সংস্থাগুলো চিনের প্রযুক্তির উন্নতিতে কাজ করেছে। এই কোম্পানিগুলি সরকারের সঙ্গে তথ্য শেয়ার করে।

চিনে মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ

জ়িনজিয়াংয়ে উইঘুর মুসলিমদের উপর নজরদারি

চিনের উইঘুর মুসলিমদের উপর নজরদারি ও তাদের অত্যাচারের ঘটনায় বিশ্বে নিন্দার মুখে পড়েছে চিন। রোজা রাখতে না দেওয়া বা তাদের আচার আচরণ পালন করতে না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে কমিউনিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে।

সাংবাদিক ও ভিন্নমত দমনে প্রযুক্তি

AI–এর মাধ্যমে চিন সাংবাদিক, ব্লগার ও মানবাধিকার কর্মীদের ট্র্যাক করে। এমনকি কে কী পোস্ট করল, কোথা থেকে করল সেই সবকিছুতেই নজর রাখে। যেহেতু চিনে ফেসবুক, গুগল বা ইউটিউব চলে না তাই এই জায়গাগুলোতে নিজেদের সংস্থাদের দিয়ে কাজ চালায় চিনা সরকার।

৩০ বছরের লড়াই, ভিয়েতনাম যুদ্ধের রক্তাক্ত অধ্যায়

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও কড়া পদক্ষেপ

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

Huawei, ZTE, TikTok–সহ একাধিক চিনা প্রতিষ্ঠানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আমেরিকা সরকার।

ইউরোপ ও ভারত কী করছে?

ইউরোপের দেশগুলিও এখন চিনা প্রযুক্তির উপর থেকে নির্ভরতা কমাতে চাইছে। ভারত সরাসরি অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছে এবং চিনা হার্ডওয়্যারের বিকল্প তৈরি করছে। তবে সময় এবং বিপুল বিনিয়োগ লাগবে।

চিনের থেকে ভারত কী শিখতে পারে?

স্বনির্ভর প্রযুক্তি

চিনের কৌশল দেখিয়ে দেয় প্রযুক্তিগত স্বনির্ভরতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ভারত এখানে এখনও অনেক পিছিয়ে। চিন চ্যাটজিপিটির বিকল্প এনেছে। সেখানে ভারত এই ফিল্ডে এখনও নবীশ।

চিনের এআই ও স্পাই প্রযুক্তি একদিকে তাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও তথ্য নিয়ন্ত্রণে শক্তিশালী করেছে, অন্যদিকে এটি বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ তৈরি করেছে।

তথ্যসূত্র

MIT Technology Review
BBC News
Forbes
Reuters
Indian Express
The Guardian



Discover more from Unknown Story

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply