সমৃদ্ধ নষ্কর
সম্প্রতি নরওয়েতে অনুষ্ঠিত হলো দাবার এক মহাযুদ্ধ। যেখানে এক ভারতীয় তরুণ দোম্মারাজু গুকেশ এর ধারালো বুদ্ধি ম্যাগনাস কার্লসেনের মতো মহীরূহকে দাবিয়ে দিয়েছিল। এরকম অনেক খেলোয়াড় দিনের পর দিন একে অপরকে ছাপিয়ে যাবে। কিন্তু এই খেলার কেন্দ্রবিন্দু দাবা, শতরঞ্জি বা বিদেশী শব্দে চেস একই রকম থেকে যাবে। বলা বাহুল্য, এই আন্তর্জাতিক মানের খেলার সৃষ্টি কিন্তু আমাদের এই ভারতেই। দাবা কিন্তু প্রাচীন ভারতে এরকম ছিল না। ধীরে ধীরে বিভিন্ন দেশ ঘুরে নিজের রং ও ঢং দুটোই পরিবর্তন করলেও প্রাচীন ভারতের সেই ছোঁয়া আজও পাওয়া যায়। তাহলে আজ জেনে নেওয়া যাক এই দাবা খেলার ইতিহাস।
জন্মের পর কেমন ছিল দাবা?
দাবার সূত্রপাত তো আমরা জানলাম ভারতে হয়েছে। কিন্তু প্রাচীন ভারতে দাবা ৮×৮ ছকের হলেও এখনকার দাবার মতো দু’রকম রঙের ছিল না। আসলে তখন কোনও রং ছিল না, শুধু ৮×৮ ছকের ছিল। তখন ভারতীয় সংস্করণের নাম ছিল চতুরঙ্গ। অর্থাৎ, চার অঙ্গ বিশিষ্ট। এখন যেমন এই খেলা খেলতে গেলে দু’জন খেলোয়াড় লাগে, তেমনই তখন চারজন খেলোয়াড় লাগতো। এখনকার দাবাতে ঘুঁটিগুলোর বিদেশী নাম যথাক্রমে, কিং, কুইন, বিশপ (ক্যামেল), নাইট, রুক ও পন। তখনও দাবার ঘুঁটির চরিত্র ছিল যথাক্রমে গজ:, অশ্ব, রথ:, মন্ত্রী, রাজন(রাজা) ও পদাতিক। লক্ষ্য করলে দেখা যায় প্রাচীন ভারতে কিন্তু বিশপ বা ক্যামেল (উট) নেই। এই খেলা যখন প্রথম পার্শিয়া (অধুনা ইরান) গেলো তখন এর নাম হলো শতরঞ্জি। এরপর যখন এই খেলা আরব দেখে পরিচিত হলো তখন গজ: বা হাতি জিনিসটা সেখানকার মানুষদের কাছে খুব অপরিচিত ছিল।
কারণ বালির দেশে হাতি নামের কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব ছিল না। তাই তারা হাতির নাম বদলে উট রাখে। এভাবে বিভিন্ন জায়গা, দেশ বিদেশ ঘুরে গজ: থেকে ক্যামেল/বিশপ এবং রথ থেকে রূক/নৌকা তৈরি হলো।
কিন্তু এই দু’রকম রঙের ব্যবহার বা চিরাচরিত পরিচিত সাদা কালো ছক কিভাবে এলো?
নানা দেশ বিদেশ ঘুরে যখন এই খেলা মধ্যযুগীয় ইউরোপে প্রবেশ করলো তখন সেখানে অন্ধকার যুগ চলছে অশিক্ষার অন্ধকারে নিমজ্জিত এই দেশ শতরঞ্জি খেলার ঘুঁটির চলন ও নিয়ম বুঝতে পারেনি। তাই ঘুঁটির অবস্থান মনে রাখার জন্য সাদা কালো বা ওই ধরনের হালকা ও গাঢ় রঙ ছকে ব্যবহার শুরু করে। এইভাবে এই খেলা ধীরে ধীরে আরও পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকে। আবার বিভিন্ন দেশ ঘুরে অনেক নিয়মকানুন যোগ বিয়োগ করে আবার ১৪৭৫ সালে ইউরোপে ফিরে আসে। ১৮০০ সাল নাগাদ এখানেই আবার টাচ রুল মুভ, চেস ক্লক নিয়ম এর সঙ্গে যুক্ত হয়। বর্তমানে আমরা যে দাবা খেলি সেটি বিশ্বব্যাপী ‘MAD QUEEN CHESS‘ নামে পরিচিত। ১৯২৪ সাল নাগাদ INTERNATIONAL CHESS FOUNDATION বা FIDE ( FEDERATION INTERNATIONAL DES ECHECS) বিশ্বব্যাপী একটি বই প্রকাশ করে যেখানে ট্রাইবেকার, র্যাঙ্কিং, টাইটেল সমস্ত কিছু যা বর্তমানে দেখা যায় সেগুলি যোগ করে।
দাবা আজ শুধুমাত্র একটা খেলা নয়, একটা সম্মানের প্রতীকও। যেখানে মগজ নামক অস্ত্রের শান দেওয়া হয়।
*(মধ্যযুগ বলতে সাধারণত ইউরোপের ইতিহাসে খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতক থেকে পনেরোশো শতকের মধ্যবর্তী সময়কে বোঝায়। এই সময়টি প্রাচীন এবং আধুনিক যুগের মধ্যে অবস্থিত এবং ইউরোপীয় ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়কাল। এটিকে অন্ধকার যুগও বলা হয়, কারণ এই সময়ে অনেক পরিবর্তন ও সংকট দেখা গিয়েছিল)
Discover more from Unknown Story
Subscribe to get the latest posts sent to your email.
Leave a Reply