কলকাতা থেকে শুরু হচ্ছে ডুরান্ড কাপ ২০২৫। ২৩ এপ্রিল ইস্টবেঙ্গল ও সাউথ ইউনাইটেড এফসির মধ্যে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে এ বারের ১৩৪ তম Durand Cup। ২৪টা দল অংশগ্রহণ করছে। এ বার যেমন আছে নতুন দল, তেমনই বাদ পড়েছে একাধিক দল। ১৮৮৮ সালে শুরু হওয়া ডুরান্ড কাপ এশিয়ার সবচেয়ে প্রাচীন টুর্নামেন্ট আর সেখানে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ফুটবলের মক্কা কলকাতা।
কী ভাবে শুরু হলো ডুরান্ড কাপ? ১৩৪ বছর আগে কী হয়েছিল? জেনে নিন এই প্রতিবেদনে-
Table of Contents
Durand Cup কী এবং কেন এটি প্রতিষ্ঠিত হয়?
ডুরান্ড কাপ হচ্ছে ভারতের তথা এশিয়ার এবং বিশ্বের তৃতীয় প্রাচীনতম ফুটবল টুর্নামেন্ট। এটি স্থাপিত হয় ১৮৮৮ সালে সিমলাতে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের একটি উদ্যোগ হিসেবে।
স্যর মর্টিমার ডুরান্ড নামক ব্রিটিশ অফিসার এই টুর্নামেন্টটি শুরু করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্তা ও কর্মীদের মধ্যে ক্রীড়া ও শারীরিক ক্ষমতা বাড়ানো।
প্রথম বছরগুলোতে শুধুমাত্র সামরিক বাহিনীর দলগুলো অংশগ্রহণ করত। তাই খেতাবও তারাই জিতত। রয়্যাল স্কটিশ ফিউজিলিয়ার্স দল ছিল যারমধ্যে অন্যতম।
প্রতিযোগিতার শুরু থেকেই এটি সামরিক ভিত্তিক হলেও ধীরে ধীরে বাইরের দলগুলো অংশগ্রহণ শুরু করে। অর্থাৎ, সামরিক দলের বাইরে এটা সকলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
দাবাকে দাবায়ে রাখতে পারবা না, দাবাকে জানতে হবে
প্রথম Durand Cup জয়: রয়্যাল স্কটিশ ফিউজিলিয়ার্স
ডুরান্ড কাপে প্রথম চ্যাম্পিয়ন রয়্যাল স্কটিশ ফিউজিলিয়ার্স দল ছিল ব্রিটিশ সামরিক দল। এরা শুরু করার পর ধীরে ধীরে একের পর এক সামরিক বাহিনী দল নামায়।
তালিকায় রয়েছে হাইল্যান্ড লাইট ইনফ্যান্ট্রি, ব্ল্যাক ওয়াচ। এরাও জিতেছে।
স্বাধীনতার পর ভারতীয় ক্লাব ও টুর্নামেন্টের প্রসার
১৯৪৭ সালের স্বাধীনতার পর সিদ্ধান্ত হয় Durand Cup বন্ধ করা হবে না।
তাই টুর্নামেন্ট পরিচালনার জন্য ডুরান্ড ফুটবল টুর্নামেন্ট সোসাইটি বা DFTS গঠিত হয়, যার নেপথ্যে ছিল ভারতীয় সেনা ও সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন।
১৯৪৭ সালের পরে আরও বেশি করে ক্লাবগুলো অংশগ্রহণ করতে থাকে।
এই সময়েই ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, সালগাওকরের মতো ক্লাবগুলো নাম লেখায়।
স্বাধীনতা পরবর্তী হায়দরাবাদ সিটি পুলিশ দল ভারতীয় ক্লাব হিসেবে প্রথম চ্যাম্পিয়ন হয়, ১৯৫০ সালে মোহনবাগানকে হারিয়ে শিরোপা জেতে
লর্ডস স্টেডিয়ামে ৮ ফুটের ঢালেই খেলা হয় ম্যাচ, জানুন এর নেপথ্যে কারণ ও ইতিহাস
কলকাতা ক্লাবের প্রভাব: মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল
কলকাতা ফুটবল সংস্কৃতিতে ডুরান্ড কাপ গভীরভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতীয় ফুটবলের প্রাক্তন ফুটবলারদের একটা বড় অংশ উঠে এসেছে Durand Cup থেকে।
১৯৫০-এর পর থেকে ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান ডুরান্ড কাপে নিয়মিত অংশগ্রহণ শুরু করে।
মোহনবাগান প্রথমবার ডুরান্ড কাপ জেতে ১৯৫৩ সালে। ফাইনালে তারা ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্য়াকাডেমিকে ৪‑০ গোলে পরাস্ত করে।
১৯৬০–৬১ সালে ফাইনাল বেশ হাড্ডাহাড্ডি হয়েছিল। সে বার ম্যাচ দু’বার গোলশূন্য হয় এবং ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান দুই দলকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এটা ডুরান্ডের ইতিহাসে অন্যতম ঘটনা।
ডুরান্ড কাপে মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলের রাজত্ব
মোহনবাগান:
মোট ১৭ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে যা ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। ২০২৩ সালে শেষবার জিতেছে তারা।
ইস্টবেঙ্গল:
মোট ১৬ বার জিতেছে। যা রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। শেষবার জিতেছে ২০০৪ সালে।
এই দুই দলই কলকাতা ফুটবলে প্রতিদ্বন্দ্বী।
ডুরান্ড কাপের বেস কলকাতা
২০১৯ সাল থেকে ডুরান্ড কাপের বেস কলকাতায় নিয়ে আসে ভারতীয় সেনা।
এটার মূল আয়োজক হচ্ছে ভারতীয় সেনার ইস্টার্ন কম্যান্ডার। AIFF-এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে তারা আয়োজন করে থাকে।
২০১৯ সাল থেকে কলকাতাকে বেস বানানোর পর ডুরান্ড কাপে আধুনিকীকরণের ছোঁয়া লাগে।
আগে একটাই শহরে আয়োজন করা হতো, এখন একাধিক শহরে আয়োজন করা হয়। গ্রুপস্তর, নকআউট পর্বে ম্যাচ হয়।
ISL ও আইলিগের ক্লাবগুলো অংশগ্রহণ করে। এছাড়াও প্রতি বছর বিদেশি ক্লাবও থাকে।
২০২৫ সালে ১৩৪তম সংস্করণ আয়োজন করা হবে ভারতের পাঁচটি রাজ্যে: কলকাতা, ইম্ফল, শিলং, কোকরাঝাড় ও ঝাড়খণ্ড রয়েছে তালিকায়।
ব্রিটিশদের থেকে বল কেড়ে বাঙালিকে ফুটবল খেলা শেখান নগেন্দ্রপ্রসাদ
ডুরান্ড কাপে তিনটি ট্রফি থাকে
- Durand Cup, এটি প্রধান ট্রফি
- President’s Cup
- Shimla Trophy
ডুরান্ড কাপ নিয়ে দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, ‘ডুরান্ড কাপ শুধু খেলা নয়, এটি ঐতিহ্য। AIFF ও সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে এটিকে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে যেতে চাই।’
কিংবদন্তী ফুটবলার সুভাষ ভৌমিক বলেছিলেন, ‘ডুরান্ড কাপ জেতার মতো সম্মান খুব কম টুর্নামেন্টেই আছে। কলকাতার ডার্বির থেকেও বড় হয়ে দাঁড়ায় কখনো কখনো।’
Durand Cup, ভারতীয় ফুটবলে আশার আলো
ডুরান্ড কাপের আয়োজকদের এখন উদ্দেশ্য হচ্ছে ডুরান্ড কাপকে উত্তর পূর্বের বিভিন্ন রাজ্যে আরও বেশি করে ছড়িয়ে দেওয়া। এই কারণে ডুরান্ড কাপের প্রচারে উত্তর পূর্বের জনপ্রিয় মুখকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
পাশাপাশি উত্তর পূর্বে প্রচার করা হচ্ছে এই টুর্নামেন্টের। এ বার যেমন আয়োজক হিসেবে ইম্ফলকে যোগ করা হয়েছে।
অন্যদিকে এ বার ডুরান্ড কাপ খেলবে লাদাখ এফসি। এই প্রথমবার লাদাখের রুক্ষভূমি থেকে কোনও দল ডুরান্ড খেলবে।
এটাও একটা বড় সাফল্য। এরসঙ্গে প্রতি বছরই বিদেশ থেকে একটা ক্লাব আসে ডুরান্ড খেলতে।
চলছে ২২৫ বছর ধরে, কেন উইম্বলডনে সাদা পোশাক পরেন খেলোয়াড়রা?
ডুরান্ড কাপের চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
চ্যালেঞ্জ:
আধুনিক টুর্নামেন্ট ফরম্যাটে ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে আধুনিকিকরণ করা
একাধিক শহরে খেলা হওয়ায় ছোট ক্লাবগুলো অংশগ্রহণ করতে পারে না। ফলে তারা অংশগ্রহণ করতে পারে না
ডুরান্ড কাপ শুধুমাত্র একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট নয়। এটি ভারতীয় ফুটবলের ঐতিহ্য। প্রতিটি শহরে, প্রতিটি ক্লাবের ইতিহাসে এই প্রতিযোগিতা যুগ যুগ ধরে প্রেরণা ও গর্ব নিয়ে এসেছে।
তথ্যসূত্র
Durand Cup Official Website
AIFF Official Website
Indian Express Archives
The Hindu
Interviews from ESPN India
Books: “A History of Indian Football” by Novy Kapadia
Discover more from Unknown Story
Subscribe to get the latest posts sent to your email.
Leave a ReplyCancel reply